ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইচ্ছে ঘুড়ি

বিশ্বজিৎ দাস
🕐 ১:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২০

‘ওগুলো কী আন্টি?’
আকাশে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিল মৌমিতা।
‘ঘুড়ি।’ স্মিতা একঝলক দেখেই বলল।
‘ঘুড়ি? ওগুলো কি নিজেই উড়ছে? না কি কেউ ওড়াচ্ছে?’
‘তোমার আমার মতোই ঘরবন্দি মানুষরা ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে।’
‘কেন ওড়াচ্ছে?’ ছোট্ট মৌমিতার মনে অনেক প্রশ্ন।

‘এই যে আমরা করোনা নামক ভাইরাসের ভয়ে ঘরে ঘরে বন্দি হয়ে আছি। তাই সবাই মিলে করোনা বুড়িকে চিঠি লিখছে, যেন সে তাড়াতাড়ি এ পৃথিবী থেকে দূরে চলে যায়।’ স্মিতা বলল। 

ছোট্ট মৌমিতার বাবা-মা দুজনই ডাক্তার। দুজনেই করোনার যোদ্ধা। হাসপাতালে থাকছেন বেশকিছু দিন থেকে। এ সময়ে মৌমিতাকে দেখেশুনে রাখছে স্মিতা। ওর খালামণি- প্রিয় আন্টি।

বইপড়া, লুডু খেলা, কার্টুন দেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজ করে করে মৌমিতা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন স্মিতা ওকে প্রতিদিন বিকেলে ছাদে নিয়ে আসে।
সব পাখি তখন ঘরে ফেরে।

স্মিতা পাখিদের জন্য খাবার পানি ভরে রাখে একটা ছোট্ট পাত্রে। ছোট ছোট চড়–ই পাখিগুলো এসে সেখানে শরীর ডুবিয়ে ¯œান করে। পানি পান করে। দেখে কী যে মজা পায় মৌমিতা।

‘আমারও লাগবে।’ মৌমিতা বলল।
‘কী লাগবে?’ স্মিতা জানতে চাইল।
‘ঘুড়ি। আমিও করোনা বুড়ির কাছে চিঠি লিখব।’
‘কী লিখবে?’

‘লিখব- সে যেন তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যায়। তার জন্য মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে।’

‘বাসায় যখন সুতা আছে তখন কাগজ কেটে ঘুড়ি বানিয়ে নিতে হবে। চলো ইউটিউবে দেখে দেখে আজই আমরা বানিয়ে ফেলি ঘুড়ি। তোমার একটা আমার একটা।’
দুজনে ঘরে ফিরে কাগজ আর কাঁচি নিয়ে লেগে পড়ল। অভ্যাস নেই। তাই অনেক কাগজ নষ্ট হলো। এ নিয়ে হাসাহাসি করল দুজনে। শেষে রাতে খাওয়ার আগে দুই-দুটো ঘুড়ি বানিয়ে ফেলল ওরা।

‘কখন ওড়াব?’ জানতে চাইল মৌমিতা। তার আর তর সইছে না।
‘কাল বিকালে উড়াব।’
‘না। দেরি হয়ে যাবে। কাল সকালেই ওড়াই?’
‘সকালে তো কেউ ওড়ায় না। তবু তুমি যখন বলছ, সকালেই ওড়াব।’ হেসে ফেলল স্মিতা।
ঘুমানোর আগে মৌমিতা ছোট্ট একটা চিঠি লিখল ঘুড়ির গায়ে।
লিখল, ‘করোনা বুড়ি, তুমি আর মানুষকে কষ্ট দিও না। তাড়াতাড়ি চলে যাও, প্লিজ।’
তাড়াতাড়ি করে ওরা দুজন উঠে এল ছাদে। স্মিতা ঠিক করল, নাটাই ধরবে ও। মৌমিতাকে দিয়ে ওড়াবে ঘুড়ি।
কিন্তু ঘুড়ি উড়ল না। স্মিতা বলল, ‘কখনো বানাইনি তো। তাই বোধ হয় বানানোটা ঠিক হয়নি।’
ভীষণ মন খারাপ করল মৌমিতা। করোনা বুড়িকে লেখা চিঠি যে পৌঁছাবেই না শেষ পর্যন্ত।
‘মন খারাপ করো না মৌ। আমরা আবার বানাব। চলো নিচে যাই। নাশতা খেয়ে আবার লেগে পড়ব।’
নাশতা খাবে কী। দুপুর পর্যন্ত মন খারাপ করে বিছানাতেই শুয়ে থাকল মৌমিতা। দুপুরে ঠিকমতো করে খেল না।
স্মিতা ওকে নানাভাবে হাসানোর চেষ্টা করল। মৌ হাসল না। শুধু একবার বলল, ‘করোনা বুড়ি তাহলে কি যাবে না।’
স্মিতা কোনো উত্তর দিল না। স্নান করিয়ে খাইয়ে ওর হাতে একটা গল্পের বই ধরিয়ে দিল।
বলল, ‘যদি তুমি আজকের মধ্যে বইটি পড়ে শেষ করতে পার তাহলে তোমার জন্য একটা মুরগির ফ্রাই বানিয়ে দেব, প্রমিজ।’
বিকেলে আন্টির জোরাজুরিতে ছাদে এল মৌ। আকাশে কতই না ঘুড়ি উড়ছে। শুধু ওরটাই নেই।
‘ধুর। করোনা বুড়িকে চিঠি লেখা হলো না।’
ঠিক তখনই একটা কাটা ঘুড়ি উড়ে এসে পড়ল একেবারে মৌমিতার গায়ের ওপর।
হাততালি দিয়ে উঠল স্মিতা।

‘দেখলে মৌ, তোমার মনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ঘুড়ি নিজেই উড়ে চলে এসেছে তোমার কাছে। এখন তুমি ইচ্ছেমতো করোনা বুড়িকে চিঠি লিখতে পারবে। তাই না?’
খুশিতে মাথা নাড়ল ও। আনন্দে চোখে পানি চলে এসেছে। এবার করোনা বুড়িকে চিঠি দেবেই দেবে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper