ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিতু ও শালিক পাখি

অলোক আচার্য
🕐 ১:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০

নিতু সকাল আটটায় তার বাবার দেওয়া হোমওয়ার্ক করতে শুরু করেছে। মোট চারটা অংক দিয়েছেন। এখন সাড়ে নয়টা বাজে। তার হোমওয়ার্ক শেষ হয়নি। মনে হয় সে হোমওয়ার্কগুলো করতেই পারবে না। নিতুর বাবা সোবাহান সাহেব অত্যন্ত রাগী স্বভাবের মানুষ। কিছুদিন হলো তার সেই রাগ আরও বেড়েছে। সবকিছুতেই রেগে যান। গতকাল সকালে নিতু যখন তার বাবাকে পেন্সিল আনতে বলল তখনো তিনি রেগে গেলেন। নিতুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। আগে যখন বাবা অফিসে যেতেন, এমন ছিলেন না।

একেবারে অন্যরকম বাবা ছিলেন। নিতুর সঙ্গে কোনোদিন রাগ করেননি। আজকাল প্রায়ই করেন। দিনরাত বাড়িতে বসে থাকেন। বেশিরভাগ সময়ই চুপচাপ। মাঝে মধ্যে টেলিভিশনে খবর দেখেন। তখন তাকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হয়। মুখ দিয়ে আহ, উঁহু জাতীয় শব্দ করেন। মনে হয় কোনো খবর দেখে তিনি এরকম করেন। সোবাহান সাহেব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বেশ কিছুদিন হয়ে গেল অফিস বন্ধ।

আগের মতো তিনি নিতুর জন্য এটা সেটা কিনে আনেন না। অবশ্য তিনি বাইরে যানই কম। তার মনে হয় তার বাবা কোনো সমস্যায় আছেন। এটা সে বুঝতে পারে। কিন্তু সমস্যাটা কি সেটাই বুঝতে পারে না। সে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। কি এক ভাইরাসের কারণে সবকিছু নাকি বন্ধ রয়েছে। এটা নাকি ছোঁয়াচে। স্কুলের ম্যাডাম ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে তাদের বলেছেন। একজন থেকে অন্যজনের ছড়ায়। এটাও নিশ্চয়ই খুব খারাপ অসুখ। স্কুলের কথা মনে হতেই তার বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। তানিশা, তানহার কথা মনে পরে। ওরাই তো নিতুর স্কুলের বেস্ট ফ্রেন্ড।

অনেকদিন পর যখন স্কুল খুলবে সেদিন সে অনেক মজা করবে। প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছ থেকে সেদিনটা খেলার জন্য ছুটি নেওয়া যায়। তার প্রিন্সিপাল ম্যাডামও খুব ভালো। কিন্তু এখন কী করা যায়? বাবার দেওয়া অংকগুলো তো করতেই হবে। মিনিট দশেক আগেও সোবাহান সাহেব একবার তার পড়ার ঘরে উঁকি দিয়েছে। তিনি চোখ বড় বড় করে নিতুকে অংক করতে দেখলেন। তারপর কিছু না বলেই চলে গেলেন। নিতু নিশ্চিত জানে তার বাবা মনে মনে মহা বিরক্ত হয়েছেন।

এত সময় লাগার কথা নয়। তিনি হয়তো ভাবছেন মেয়েটার লেখাপড়ায় একদমই মন নেই। পড়ার সময় খালি এটা ওটা করা। কিন্তু নিতু মোটেই এটা ওটা করছে না। সে অংক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনোভাবেই মন দিতে পারছে না। তার মন পড়ে আছে ছাদের শালিক পাখিটার কাছে। শালিকটা প্রতিদিন সকাল দশটায় ছাদে আসে। নিতু পাখিটাকে কিছু খেতে দেয়। শালিক পাখিটা খেয়ে উড়ে যায়।

গত একমাস ধরে এটা হচ্ছে। কাউকে বলেনি। নিতু অংক করতে সবচেয়ে ভালোবাসে তার স্কুলের মিস সাবিহার কাছে। সাবিহা মিসের কাছে অংক করতে বসলেই অংক হয়ে যায়। তার মুখটাই মনে হয় এমন। দেখলেই আত্মবিশ্বাস জাগে। ক্লাসে এত চমৎকার করে অংক বোঝায় যে তার ক্লাসের প্রায় সবাই অংকে ভালো। এখন অবশ্য মিসকে ফোন করা যায়। বাবা বাইরে গেছে। তার মুখ না দেখে ফোন দিলেও কাজ হয়।
‘হ্যালো মিস!’
‘কে বলছ! নিতু?’
‘হু।’
‘অংক বুঝতে পারছ না?’
‘হু।’
‘ঠিক আছে। তুমি বই থেকে বলো। আমি শুনছি।’
নিতু জানে এরপর সে সব অংক পারবে। কিন্তু ফোন করবে না। কারণ সাবিহা মিস তো তাকে সারাজীবন অংক বলে দেবেন না। এখন দশটা বেজে গেছে। নিতুর বারবার শালিক পাখিটার কথা মনে পড়ছে। তার এখন ছাদে যেতে হবে। শালিক পাখিটাকে খাওয়াতে হবে। নিতু বই বন্ধ করে উঠে যায় ছাদে। দরজা খুলে দেখে শালিক পাখিটা ঠিক এসেছে। নিতু পাখিটাকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper