ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বাস্থ্য বটিকা

জান্নাতা নিঝুম শিল্পী
🕐 ১২:২৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

পিঠাপিঠি দুই ভাই মিঠু জিঠু। বাঁদরামিতে মিঠু-জিঠু এ পাড়ার সেরা হলেও, ওরা কোনো অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেয় না। প্রতিবাদ জানাবেই! দুজনই খুব সাহসী ছেলে। আজ পুকুরপাড়ে ডালিম গাছটার নিচে মিঠু ঠ্যাঙয়ে ঠ্যাঙ তুলে বসে হাই তুলছে। এমন সময় জিঠু এসে বলল, ‘কী ব্যাপার মিঠু ভাই! তুমি এখানে বসে আছ যে? ওদিকে কত কাজ বাকি!’

‘তো কী করব, বল? সকাল সকাল তো মাথা খারাপ করে দিয়েছে ওই শুঁটকিটা!’
শুঁটকি হলো মিঠুদের পাড়ার চিকু, দেখতে খুব চিকনা! তাই মিঠু ওকে শুঁটকি বলে ডাকে।
‘কেন? কী করেছে ও?’
‘কী আবার করবে। আমার মাথা খেয়েছে! ‘আমার কাছে এসে এই সকালে ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে। আজ বিকেলে তোমাদের সঙ্গে ইকো পার্কে নিয়ে যাবে। আমার মাকে যেন বলবে না।’
‘আচ্ছা! তুই বল জিঠু, ওর মাকে যদি না বলে ওই শুঁটকিকে নিয়ে যাই পার্কে বেড়াতে, তাহলে খবর করে দেবেন ওর মা! এমনিতেই তো ওকে না খাইয়ে খাইয়ে শুঁটকি বানিয়েছেন, আবার এখন যদি না বলে ঘুরতে নিয়ে যাই, তাহলে তো হাঁড়ির ভাত ওর জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।’
জিঠু বলল, ‘আচ্ছা! মিঠু ভাই চিকুর মা এমন কেন বল তো? আমাদের মা তো এমন নয়। পড়ার সময় পড়ার সুযোগ দেয়, খেলার সময় খেলার। মা বলে, এই বয়সে আমাদের একটু বিনোদনের প্রয়োজন আছে। খেলাধুলা করার দরকার আছে। এতেও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। চিকুটাকে কোনো সময় ওর মা বেরুতেই দেন না বাসা থেকে।’
মিঠু বলল, ‘আমাদের মা খুব ভালো। কিন্তু শুঁটকির মা এগুলো বোঝেনই না, মনে করেন ঘরকুনো হয়ে টেবিলে বসে থাকলেই ওর পড়াশোনা ভালো হবে। কিন্তু তা নয়। চিকু পড়াশোনায় একদম কাঁচা। ঘরে বন্দি থেকে কেউ কখনো পাকা হয়নি বুঝলি জিঠু!’
‘হ্যাঁ মিঠু ভাই, বুঝলাম। চল, ব্যাপারটা মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। তাহলে আমরা চিকুর সমস্যাটা সমাধান করতে পারব।’
‘হ্যাঁ চল।’
দুপুরে হাত-মুখ ধুয়ে, মায়ের কাছে খেতে বসল মিঠু জিঠু, আলু-বেগুন ভর্তা, পোনা মাছ আর ডাল দিয়ে ভাত খাচ্ছে ওরা। খেতে খেতে জিঠু বলে উঠল, ‘আজকের রান্নাটা কিন্তু হেব্বি হয়েছে, মা।’
মা হেসে বললেন, ‘তাই নাকি! রোজই ভালো হয়। কোন দিন খারাপ হয় বল দেখি!’
মিঠু বলল, ‘মা, আজ বিকেলে আমরা পার্কে বেড়াতে যাব, চিকুও যেতে চায়, কিন্তু ওর মা যেতে দেবে না।’
‘বলিস কী মিঠু? কেন যেতে দেবে না?’
‘হ্যাঁ মা। সত্যি বলছি!’
‘চিকু যে আমাদের সঙ্গে রোজ মাঠে যেটুকু খেলে তাও লুকিয়ে লুকিয়ে। মাকে খুব ভয় পায় চিকু।’
‘আচ্ছা। ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দে।’
খাওয়া শেষে মিঠু-জিঠু হাত ধুয়ে ‘ইয়া... আ আ আ’ বলে চিৎকার করে উঠল।
মিঠু-জিঠুর মা এলেন চিকুদের বাড়িতে। পিছু পিছু ওরা দুজনও এল।
চিকুর মা মিঠুর মাকে দেখে বলে উঠলেন, ‘কেমন আছেন আপা? এতদিন পর আমাদের বাড়িতে পা পড়ল?’
মিঠুর মা হেসে বললেন, ‘সংসারের কাজে খুব ব্যস্ত থাকি আপা। ছেলেদের সামলাতে হয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।’
‘বসেন আপা, বসেন।’ চেয়ার এগিয়ে দিলেন চিকুর মা।
‘তা চিকু কোথায়? ওকে তো দেখছি না?’
‘আর বইলেন না আপা! ছেলেটা যা বেয়াড়া হয়েছে। একটুও পড়ে না, খায় না, সব সময় ফাজলামি করে। এখন ঘরের মধ্যে বসে আছে।’
মিঠুর মা চিকুকে ডাকলেন, মিঠু-জিঠুও এল।
চিকুর মাকে মিঠুর মা বললেন, ‘আপা, ছেলেকে সবসময় ঘরে বন্দি করে রাখলে, ওর মন ভালো থাকবে না। ও একঘেয়ে বোধ করবে। পড়াশোনার ক্ষতি হবে। আপনি ওকে বাইরের সবুজ ছোঁয়া, প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দিন, প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে দিন। ওর স্বাস্থ্য ও মন ভালো হয়ে উঠবে।’
চিকুর মা লজ্জা পেয়ে বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন, আপা। মিঠু-জিঠুর মতো চিকুকে যদি আমি খোলামেলা রাখতাম তাহলে ও পড়াশোনায় ভালো হত। আজ থেকে চিকুও মিঠু-জিঠুর সঙ্গে খেলবে।’
ওরা তিনজনে ইয়াহু চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে পড়ল ইকো পার্কের দিকে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper