ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রবির পর রায়

আল-আমিন হোসেন
🕐 ৬:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০১৮

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র, যা ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। ১৯৫৬ সালের কান ফিল্ম ফেস্টিভালে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেল পথের পাঁচালী।

এরপর একের এক তৈরি করে চললেন অপরাজিত, জলসাঘর, অপুর সংসার, তিন কন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মহানগর, চারুলতা, গুপী গাইন বাঘা বাইন, জন অরণ্য, অশনি সংকেত, গণশত্রু, আগন্তুকসহ আরও অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র। বলছি সত্যজিৎ রায়ের কথা।
চলচ্চিত্র জগতে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সংগীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা-সবই নিজে করতেন তিনি।
জানো তো, ১৯৪৩-এর এপ্রিলে তিনি ব্রিটেনভিত্তিক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় মাসিক ৮০ রুপি বেতনে জুনিয়র ভিজ্যুয়ালাইজার হিসেবে যোগদান করেন সত্যজিৎ।
চলচ্চিত্রকার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত পরবর্তী ১৩ বছর তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।
সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সাহিত্য রচনায়ও যে সমমাত্রার একজন সফল সাহিত্যিক তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু চলচ্চিত্রকার হিসেবে তার জগৎ জোড়া খ্যাতির আড়ালে তার সাহিত্যিক খ্যাতি হয়তো বা একটু ঢাকা পড়েছে।
অবশ্য তা কেন বলছি বুঝতেই পারছো! তার যে চলচ্চিত্রকার খ্যাতি, সে তুলনায় তার সাহিত্যিক খ্যাতি তো অবশ্যই কম। কিন্তু এও জানি যে, একজন সাহিত্যিকের পক্ষে তার যে রচনা অথবা তার লেখক খ্যাতি তাও সচরাচর খুব একটা দেখা যায় না।
কিংবা একজন লেখকের পক্ষে এর চেয়ে বেশি খ্যাতি লাগেও না। তাই কি তার সাহিত্য নিয়ে আলোচনা কম করা হয়? মোটেও না। একজন সাহিত্যিক যতটা আশা করতে পারেন, সে পরিমাণ আলোচনা তার সাহিত্য পেয়েছে এবং পাচ্ছে।
তার সাহিত্যগুলো মূলত, তার পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত শিশুতোষ ‘সন্দেশ’ পত্রিকার জন্য লেখা হলেও যা পরবর্তী সময়ে বই আকারে বের হয়। ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি মাঝখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ এটি আবারও চালু করেন। সত্যজিৎ-এর লেখাগুলো প্রধানত কিশোর রচনা হলেও তা সব বয়সী পাঠক পড়েই আনন্দ পেয়ে থাকেন। বাংলা সাহিত্যের সেরা গোয়েন্দা চরিত্র ‘ফেলুদা’ ওরফে প্রদোষচন্দ্র মিত্র সত্যজিৎ রায়েরই সৃষ্টি। ফেলুদা চরিত্রটির জন্ম খুব আকস্মিকভাবেই হয়েছিল।
১৯৬৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের খসড়া খাতার তৃতীয় পাতায় খুব নাটকীয়ভাবে হঠাৎ করেই এই গোয়েন্দার আবির্ভাব ঘটে। তার বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর আরেকটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় চরিত্র ‘প্রফেসর শঙ্কু’। এ ছাড়া তিনি অনেক ছোটগল্প লিখেছেন। করেছেন অনুবাদ।  
মজার ব্যাপার কি জানো, তার লেখা বইয়ের প্রচ্ছদ এবং ভেতরের ছবি-সবই তার নিজের হাতে আঁকা। চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং শুটিং নিয়েও তিনি লিখেছেন কিছু বই। এগুলো হচ্ছে- আওয়ার ফিল্মস, দেয়ার ফিল্মস, বিষয় চলচ্চিত্র, একেই বলে শুটিং ইত্যাদি। নিজের ছেলেবেলা নিয়েও তিনি লিখেছেন, ‘যখন ছোট ছিলাম’।
ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কুর মতো কালজয়ী চরিত্রের স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ১৯২১ সালের ২ মে। জানো তো, তিনি ছড়াকার সুকুমার রায়ের ছেলে এবং শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী তার পিতামহ।
কলকাতা শহরে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হলেও পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মাশুয়া গ্রামে।
সত্যজিৎ-এর তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমার রায় মারা যান। মা সুপ্রভা দেবী তাকে কষ্ট করে বড় করেন।
উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সত্যজিৎ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে যান। কিন্তু ১৯৪০ সালে মায়ের অনুরোধে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলেও পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই ১৯৪৩ সালে কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি। তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়। নিজ দেশেও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ভারতরত্নসহ অসংখ্য পুরস্কার পান।
রবির (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) পর বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের কেউই বিশ্বের দরবারে এত সম্মান পাননি, যতখানি পেয়েছেন রায় (সত্যজিৎ রায়)। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল ৭০ বছর বয়সে সত্যজিৎ রায় কলকাতায় মারা যান।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper