বাংলায় মুদ্রিত শিশুপত্রিকা
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০১৮
আঠারো শতকের শেষ ভাগে ১৭৭৮ সালে প্রথম বাংলা মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষার প্রথম পত্রিকা। বাংলায় মুদ্রিত প্রথম পত্রিকাটি একটি শিশুপত্রিকা।
এই তথ্য বাংলা শিশুসাহিত্যের জন্য নিশ্চয়ই উল্লেখযোগ্য। ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এই শিশুপত্রিকার নাম ছিল দিগ্দর্শন। সম্পাদক ক্লার্ক মার্শম্যান। ওই বছর ২৩ মে, অর্থাৎ পরের মাসেই প্রকাশিত হয় প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ। এর পরের শিশুপত্রিকা দুটির নাম পশ্বাবলী (বিজ্ঞান পত্রিকা, ১৮২২) এবং জ্ঞানোদয়।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত অন্যান্য শিশুপত্রিকার নাম হচ্ছে সখা, সাথী, অঞ্জলি, তোষিণী ইত্যাদি। এরপর ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে সোপান, ১৯২৪ সালে রাজভোগ এবং তারপর পাপিয়া। সেই পথ ধরে প্রকাশিত হয়েছে সন্দেশ, খোকাখুকু, শিশুসাথী, মৌচাক, কৈশোরক, জলছবি, শিশু সওগাত ইত্যাদি পত্রিকা। এভাবে শিশু-কিশোর পত্রিকার সংখ্যা ও বিষয়-বৈচিত্র্য বেড়েছে।
সাতচল্লিশের দেশভাগের পর নতুন দেশে শিশু-কিশোর সাহিত্য যেমন অব্যাহতভাবে বিকশিত হয়েছে, তেমনি ছোটদের পত্রপত্রিকার প্রকাশনাও নতুনভাবে শুরু হয়েছে। পঞ্চাশের দশকে ফয়েজ আহমদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় হুল্লোড়। এরপর এলো শাহীন ও সিতারা নামের দুটি পত্রিকা। শিশু সওগাত আর শিশু মোহাম্মদী তখনো প্রকাশিত হতো। এ ছাড়া ছিল মুকুল, সৃষ্টি সুখের উল্লাস এবং কবি আজিজুর রহমান সম্পাদিত আলাপনী। এসব শিশুপত্রিকার অধিকাংশই মাসিক। তবে এদের মধ্যে যাদের বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগ ছিল না, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও আর্থিক সংকটে তাদের প্রকাশনা প্রায়ই অনিয়মিত হয়েছে।
১৯৫৪ সালে সমকালীন পাঠকরুচির সঙ্গে সংগতি রেখে খেলাঘর প্রকাশিত হলো। প্রচ্ছদেই লেখা, বেগম জেব-উন-নেসা আহমদ সম্পাদিত। পত্রিকাটি এক দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। তার আরও পরে, এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেও অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয় খেলাঘর। অধ্যাপক মনসুরউদ্দীন আহমদ, আতোয়ার রহমান, কাজী আবুল হোসেন, জোবেদা খানম প্রমুখ লেখক নিয়মিত লিখেছেন খেলাঘরে। সচিত্র কিশোর মাসিক পূরবী নামেও
একটি ছোটদের কাগজ প্রকাশিত হতো। গল্প, কবিতা, ছড়া, অ্যাডভেঞ্চার, রূপকথা, জীবনী-সবই স্থান পেয়েছে এই পত্রিকায়।
ষাটের দশকে শুরুর দিকে প্রকাশিত হলো সবুজ পাতা। ইসলামিক একাডেমির প্রকাশনা হিসেবে, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলীর সম্পাদনায় এই পত্রিকা দীর্ঘদিন প্রকাশিত হয় নিয়মিতভাবে। সবুজ পাতায় ধারাবাহিক উপন্যাস এলো। আবুল হোসেন মিয়ার ‘সবুজ সংঘ’, কাজী আবুল হোসেনের ‘রাঙা আলোর হাতছানি’, কাজী গোলাম আহমদের ‘পথে পথে পান্না’-এসব উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে সবুজ পাতায়। মাঝে মাঝেই দেখা গেছে ফররুখ আহমদের কবিতা।
১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে হাশেম খানের আঁকা বর্ণাঢ্য ও আধুনিক প্রচ্ছদে শোভিত হয়ে কচি ও কাঁচা প্রথম সংখ্যা বের হয়। প্রথম প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠক সমাজে জেগেছে বিপুল সাড়া। প্রতিটি সংখ্যাই ছোটদের প্রিয় এবং বিখ্যাত সব লেখকের রচনা দিয়ে সুসজ্জিত। ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, মোহাম্মদ নাসির আলী, বেগম সুফিয়া কামাল, ফয়েজ আহমেদ, আবদুল্লাহ আল-মুতী, আফলাতুন, হাসান জান, রাহাত খান, শামসুর রাহমান, মাফরুহা চৌধুরী, শামসুল হক-এরা সবাই এ পত্রিকার লেখক। এককথায়, ওই সময়ের গোটা দেশের শিশুসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের একসঙ্গে জড়ো করেছে কচি ও কাঁচা।
সে সময় অভাবনীয় সৌন্দর্য ও আভিজাত্য নিয়ে বাংলাদেশের শিশু-কিশোর সাহিত্যে এলো আরও একটি পত্রিকা। শিশুসাহিত্যের শুকনো মাটিতে স্বপ্নময় বৃষ্টির রিমঝিম নিয়ে এলো মাসিক টাপুর টুপুর। কামরুল হাসানের আঁকা সুরুচিশোভন প্রচ্ছদ, হাশেম খান আর রফিকুন নবীর অঙ্গসজ্জার সঙ্গে অতি আকর্ষণীয় লেখক তালিকা। আমার মতো অসংখ্য শিশু পাঠক পেল নতুন স্বাদ, নতুন একটা জগতের সন্ধান। ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হলো প্রথম সংখ্যা। এর সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ শফী আর এখলাস উদ্দিন আহমদ। এই মাসিক পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় শিশুসাহিত্য বিতান, ৮ ফিরিঙ্গিবাজার রোড, চট্টগ্রাম থেকে।
শিশু-কিশোর সাহিত্যে সব যুগেই দু’একটি পত্রিকার প্রাধান্য দেখা যায়। সত্তরের দশকের শেষ দিকটায় সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা নিয়মিত বের হতো। নব্বইয়ের দশকে আমীরুল ইসলামের সম্পাদনায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত আসন্ন অথবা লুৎফর রহমান রিটন সম্পাদিত ছোটদের কাগজ খুবই উৎকৃষ্টমানের পত্রিকা। ওই একই সময়ের আরেকটি পত্রিকা টইটম্বুর। এটি সম্ভবত সবচেয়ে নিয়মিত এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228