ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাবার জন্মদিন

উৎপলকান্তি বড়ুয়া
🕐 ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০

রানু ও রনি। দু’ভাই বোন। ওরা জমজ। মা-বাবার বড় আদরের সন্তান দু’জন। বয়স আট। পড়ে একসঙ্গে একই ক্লাসে। একই স্কুলে। তৃতীয় শ্রেণিতে।

প্রাইভেট টিউটর আসেন সন্ধ্যায়। রনি পড়ার ঘরে টিচারের সামনে যায় মার হাত ধরে। রানু যায় বাবার হাত ধরে। দু’জনের এটা এক অভ্যাস। টিচারের কাছে পড়ার রুমে মা আর বাবার সঙ্গে ছাড়া পড়তে ঢুকবে না ওরা। বাবা না থাকলে, রানুকে হয়তো বুঝিয়ে সুঝিয়ে মা হাত ধরে টিচারের সামনে নিয়ে যায়। কিন্তু, রনি! না। কোনো কারণে যদি, মা কাজে ব্যস্ত বা বাসায় না থাকে, কিংবা শপিংয়ে যায় তাহলেই হল! রনির আর সেদিন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়া হবেই না। কোনোমতেই বাবার হাত ধরে টিচারের সামনে যাবে না। সে এক অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
মা ছাড়া রনি কিছুই বোঝে না। বাবা যেন তার কেউ-ই না। অথচ এদিকে রানু বাবার জন্যে পাগল। মাকেও রানুর অবশ্য পছন্দ। কথা শোনে, মায়ের চারপাশে সারাদিন ঘুরঘুরও করেÑ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে।
সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা বাবার অফিস। বাসা থেকে হেঁটে দশ মিনিটের পথ। বাসার নানা কাজ আর রানু-রনিকে নিয়েই মায়ের সারাদিন কেটে যায়।
রানু-রনির স্কুলও বাসার পাশের গলির শেষ প্রান্তেই। হেঁটে যাওয়া পথ। ওরাও দুজনে হেঁটে স্কুলে যায় প্রতিদিন। অথচ প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেতে একজন মা, একজন বাবার হাত ধরে তবে যাবে। প্রাইভেট টিউটর দুজনের বিশেষ করে রনির এ ব্যাপারটা খেয়াল করে। ভাবেন এর একটা বিহিত করা উচিত।
রানু-রনি প্রাইভেট টিউটরের সামনে পড়তে বসে। টিচার প্রথমে রানুকে প্রশ্ন করেনÑ রানু, তুমি কাকে বেশি ভালবাসো? বাবা, নাকি মাকে?
-বাবাকে।
-মাকে ভালবাসো না?
-বাসি। তবে বাবা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিও বাবাকে খুব ভালোবাসি।
-মা ভালোবাসে না?
-হ্যাঁ, মাও আমাকে ভালোবাসে। আমিও মাকে ভালোবাসি তো!
-গুড। টিচার রানুকে বাহবা দেয়।
এবার রনিকে জিজ্ঞেস করেন টিচারÑ তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো?
-মাকে। মা আমাকে খুব ভালোবাসে।
-কেন, বাবা ভালোবাসে না?
রনি নিরুত্তর।
-বলো, বাবা তোমাকে ভালোবাসে না? তুমি বাবাকে ভালোবাসো না?
রনি এবারও নিরুত্তর।
-না স্যার। বাবার সঙ্গে বসে খায়ও না। বাবার সঙ্গে ঘুমায়ও না রনি। বাবা কত আদর করে খেতে দেয়। কত সোহাগ করে ঘুম পাড়াতে চায়Ñ সে বাবার হাতে খেতে চায় না। ঘুমও যায় না। মাকেই খাওয়াতে হয়। ঘুম পাড়াতে হয়। হাত মুখ ধোয়াতে হয়। কাপড় পরাতে হয়।
রানু টিচারকে অভিযোগের সুরে আগবাড়িয়ে জবাব দেয়। টিচার আগে থেকেই জানেন। রনি, তার বাবার প্রতি কিছুটা অমনোযোগী। ভাবেন, ওকে বাবা সম্পর্কে বোঝানো দরকার।
-রনি, তোমার পরনে কার্টুন গেঞ্জিটা খুব সুন্দর তো!
রনি টিচারের দিকে তাকিয়ে একটু নড়েচড়ে বসে।
-এটা কোত্থেকে কিনেছ?
-নিউমার্কেট থেকে।
-বাহ্। তোমার এই সুন্দর রঙিন বইয়ের ব্যাগটা কে কিনে দিল রনি তোমায়?
-বাবা কিনে দিয়েছে।
-ও, তাই! বারান্দায় তোমার খুব সুন্দর তিন চাকার সাইকেলটা, কে এনেছে তোমার জন্য?
-বাবা কিনে এনেছে আমার জন্য।
-সাইকেলটা তোমার কি খুব পছন্দ?
-হ্যাঁ, আমি প্রতিদিন আমাদের উঠোনে সাইকেল চালাই। সাইকেল চালাতে খুব ভালো লাগে। রানুও সাইকেল চালায়। আমি রানুকে সাইকেল চালাতে দিই তো!
-দেখো রনি, বাবা তোমাকে কত ভালোবাসে। বাবা তোমাকে ভালোবাসে বলেই, রানুর মতো তোমার জন্যও তোমার পছন্দের কার্টুন, গেঞ্জি, বইয়ের ব্যাগ, তোমার জন্য সাইকেল, নানান খেলনা কিনে দেন। বাবা, তোমার জন্যে, তোমাদের দুজনের জন্যে কত কিছু করেন। কী, তাই না রনি? সত্যি বলছি না?
এতক্ষণ টিচারের কথা মন দিয়ে শুনছিল রনি। এবার আস্তে করে মাথা নেড়ে সায় দেয়Ñ হ্যাঁ, টিচার।
-তাহলে তুমি মনে রেখো রনি, মা তোমাকে যেমন ভালোবাসে, ঠিক তেমনি বাবাও তোমাকে খুব ভালোবাসে। বাবা-মা দুজনেই তোমাকে, তোমাদের দু’ভাইবোনকে খুবই ভালোবাসে। তোমাদের মঙ্গল কামনা করে। তোমাদের সুখ কামনা করে প্রতিনিয়ত।
রনি টিচারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কী যেন ভাবে!
রানু টিচারকে উদ্দেশ্য করে বলে, আজকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিতে হবে।
-কেন?
-আজ বাবার জন্মদিন। বাবার জন্যে কেনা ফুলের স্টিক রেডি করতে হবে। বাবার হাতে দেব। আজ যে বাবার জন্মদিন, তা কিন্তু বাবার মনে নেই।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ টিচার। রানু জবাব দেয়।
-রানু, ফুলের স্টিকটা কিন্তু আমি নিজের হাতেই বাবার জন্যে টেপ এবং সেøপিং পেপারে মুড়িয়ে রেডি করব।
রনি অতি উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠে কথাটা।
-বাবাকে আজকে সত্যি সত্যি সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে। বাবা সত্যি চমকে যাবে। তাই না রানু? রনির চোখে মুখে এক নতুন উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়িয়ে পড়ে।
-স্যার, প্লিজ। আজ একটু আগেভাগেই ছুটি দিন। বাবা, বাজার থেকে আসার আগেই, সব আয়োজন রেডি করে ফেলতে হবে। রনি টিচারের প্রতি বিনয়সহ অনুরোধ জানায় আগেভাগে ছুটির জন্য।
টিচার ঝুঝতে পারেন। তার কথায় কাজ হয়েছে। রনি, রানু ও তাদের মা ওরা তিনজন মিলে তাদের বাবাকে আজ সত্যি সত্যি অন্যরকম উইস করবে, সারপ্রাইজ দেবে বাবাকে জন্মদিনের।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper