ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যবধান

মোহাম্মদ আবদুর রহমান
🕐 ১২:৫৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০

আজমল ও মুসা পরস্পরের খুব কাছের বন্ধু। তারা একসঙ্গে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আজমলের বাবা অনেক বড়লোক। আর মুসার বাবা খুব গরিব। এই ব্যবধান তাদের মনে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারেনি। সব দিন একসঙ্গে স্কুলে যায়। একসঙ্গে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে। বিকালে একসঙ্গে খেলে। তাদের দুজনের বাড়ির মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি নয়।

সারা দেশে লকডাউন চলছে। স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে তাদের। কিন্তু বন্ধ হলে কী হবে। তারা একসঙ্গে বেশি বেশি খেলার সুযোগ পায়। সে সুযোগে প্রথম দিন তারা অনেক সময় ধরে খেলে। তারা দুজন একে অপরকে বলে, স্কুল ছুটি হওয়াতে ভালোই হয়েছে। অনেক সময় ধরে খেলব রোজ। শুধু আনন্দ আর আনন্দ।

মুসা বাড়ি ফিরে দেখছে তার মা কাঁদছে। সে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কেন কাঁদছ মা? কী হয়েছে তোমার? মায়ের কান্নার বেগ আরও বেড়ে যায়। মুসাও কাঁদতে শুরু করে। মুসার মা আমিনা ছেলের কান্না দেখে কাঁদো কাঁদোভাবে বলে, তোর বাবা ফোন করেছিলেন। তিনি নাকি শহর থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। সব কাজ বন্ধ। জানেন না কবে শুরু হবে।

এই কথা শোনার পর মুসার কান্নার বেগ আরও বেড়ে যায়। সে জানে তাদের বাড়ি ও শহরের ব্যবধান প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। এত ব্যবধান কত দিনে হেঁটে ঘোচাতে পারবেন বাবা। কত বড় ক্ষত সৃষ্টি হবে পায়ে।

মাত্র দশ দিন হল বাবার যাওয়া। শহর থেকে কাজ করে টাকা পাঠালে তারা খেতে পায়। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকলে কীভাবে চলবে সংসার! যাওয়ার আগে বাবা কিছু চাল ডাল কিনে দিয়েছিলেন। তা আর খুব জোর দুই-এক দিন চলবে। এসব ভাবতে ভাবতে গোটা রাত কেটে গেল মা ও ছেলের।

যেন তাদের মাথার ওপর চেপে বসছে দারিদ্র্যের পাহাড়। পরের দিন মুসা সকাল সকাল আজমলের বাড়ি আসে। খুলে বলে সব কথা। তার সব কথা শুনছিলেন আজমলের মা। মুসাকে আজমলের মা খেতে দেন। খাওয়া শেষ হলে তিনি মুসাকে বলেন, এখন থেকে আর আমাদের বাড়িতে এসো না বাবা। কারণ তোমার বাবা বাড়ি ফিরছেন।

নিশ্চয়ই করোনাভাইরাস নিয়ে আসবেন। আমি তোমার জন্য ছেলেকে হারাতে পারব না। মুসা হতবাক হয়ে যায় কথা শুনে। তার বুকে সৃষ্টি হয় বেদনার কালবৈশাখী ঝড়। তাই সে কিছু না বলে বাড়ি ছুটে যায় দুরন্ত গতিতে। বারবার প্রতিধ্বনিত হতে থাকে আজমলের মায়ের কথাগুলো। চোখ দিয়ে ঝরতে থাকে বন্ধুত্বের ব্যবধানের বৃষ্টি। এত দিন যেটা ব্যবধান ছিল না। করোনাভাইরাস সেই ব্যবধান সৃষ্টি করল। যে ব্যবধান হয়ত কোনো দিন মুছতে পারবে না মুসা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper