ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লকডাউন

আবুল কালাম আজাদ
🕐 ৭:২০ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২০

শ্রেয়ার মন খারাপ। স্কুল বন্ধ। টিচারও আসেন না। গানের টিচারও আসেন না। ছবি আঁকার ক্লাস বন্ধ। পাশের বা নিচের ফ্ল্যাটের বন্ধুদের সঙ্গে খেলাও বন্ধ। এখন লকডাউন। খুব একঘেঁয়েমি সময়।

বাবা ব্যাপারটা ধরতে পেরেছেন। তিনি শ্রেয়ার কাছে এলেন। পাশে বসলেন। বললেন, লকডাউন মানে কী?

শ্রেয়া ঝট করে বাবার মুখে তাকাল। বলল, লকডাউন মানে হল সবকিছু বন্ধ, মন খারাপ করে চুপচাপ ঘরে বসে থাকা।

: না, সবকিছু বন্ধ না। শুধু বাইরে যাওয়া বন্ধ।

: তাহলে আর থাকল কী? কোথাও যেতে পারব না, কেউ আসতে পারবে না। এরকম ভাল্লাগে?

: প্রতিদিন ঠিক ঠিক সূর্য উঠছে, সূর্য ডুবছে। আকাশে চাঁদ জেগে উঠছে, চাঁদ নিভে যাচ্ছে। সারা রাত তারারা মিটিমিটি জ্বলছে। এইসব সৌন্দর্য আমরা নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারি।

শ্রেয়ার চোখ বড় ও গোল হয়ে গেল। বাবা বললেন, আমাদের ভেতর দয়া-মায়া-মমতা আছে। এসব কিন্তু লকডাউন হয়নি। দোকান, রেস্তোরা বন্ধ বলে কুকুরগুলো খাবার পাচ্ছে না। তুমি প্রতিদির বাড়তি ফেলনা খাবারগুলো ওদের জন্য গেটে রেখে আসতে পারো। কাকদের অবস্থাও খুব খারাপ। বিকেলে ছাদে গিয়ে ওদেরকেও কিছু খাবার দিতে পারো। জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।

বাবার কথাগুলো শ্রেয়ার খুব ভালো লাগলো। সে রাতে কুকুরের কান্না শোনে। জানালায় কাকদের আর্তনাদ তো সারাদিনই শোনা যায়। সে তো এভাবে কখনো ভাবেনি। কাল থেকে নিয়মিত কুকুর আর কাকদের খাবার দিতে হবে। বাবা বললেন, এই অবসরে তুমি নতুন কিছু শিখতে পারো। শেখার তো শেষ নেই।

প্রতিটা মানুষের মধ্যে লুকিয়ে আছে কোনো না কোনো সৃজনশীল গুণ। তুমি চেষ্টা করে দেখতে পারো, কোনটা তুমি করতে পারো। নাচ করতে পারো। গান করতে পারো। ছবি আঁকতে পারো। গল্প অথবা কবিতা লিখতে পারো। বাবার কথাগুলো শ্রেয়ার কাছে খুবই যুক্তিসঙ্গত মনে হলো। সৃজনশীলতার চর্চা খুব ভালো লাগে। সৃজনশীল মানুষ ওর প্রিয়। কিন্তু স্কুল খোলা থাকলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সবসময় বসতে পারে না সৃজনশীল কাজের জন্য। এবার তাহলে গান আর ছবি আঁকাটা ভালো করে ঝালিয়ে নেওয়া যাক।

বাবা বললেন, মানুষের ব্রেন কিন্তু লকডাউন হয়নি। এই অবসরে তুমি বই পড়তে পারো। তোমার ঘরে অনেক বই আছে। তুমি না হয় সশরীরে কোথাও যেতে পারছ না। তাই বলে তোমার যোগাযোগ কিন্তু আটকে থাকার কথা না। তুমি ফোন করে, ভিডিওকল করে আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবার খোঁজ নিতে পারো।

শ্রেয়া অবশ্য ফোন বা ভিডিও কলে অনেকের সাথে যোগাযোগ করে। তবে বই পড়তে সেভাবে বসা হয়নি। অনেক সুন্দর সুন্দর বই আছে তার। বিভিন্ন সময়ে বাবা, মা, চাচা, মামা এরা উপহার দিয়েছেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানগুলোতেও বই পেয়েছে অনেক। বইগুলো পড়ে ফেলতে হবে এই ফাঁকে।

বাবা বললেন, ধ্যান শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দেয়। দিনের কোনো একটা সময়ে তুমি ধ্যানে বসতে পারো। তোমাকে ধ্যানের নিয়ম-কানুন শিখিয়েছি। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস টেনে নেবে। তারপর আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে। তারপর মনের বাড়িতে গিয়ে সুন্দর ও পবিত্র কোনো মনছবি দেখবে।

শ্রেয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, প্রতিদিন কিছু সময় ধ্যান করবে। বাবা বললেন, তোমার ঘুম কি লকডাউন হয়ে আছে? নিশ্চিন্ত ফ্রেশ ঘুম দাও। স্কুল, টিচার থাকলে বাসায় কোনো কাজ করার সুযোগ পাও না। এখন মাকে এটা-ওটা করতে সাহায্য করো। বাবাকে সাহায্য করো। দাদা-দাদুর জন্য কিছু করো। তারা অনেক খুশি হবেন। তোমার স্বপ্নে পরিধিকে বাড়িয়ে দাও। আশা, আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন এসবের মাঝে কোনো লকডাউন নেই।

মুহূর্তে শ্রেয়ার মন ভালো হয়ে গেল। বুঝতে পারল, লকডাউন খুব সীমিত পরিসরে। বিশাল ও বিস্তৃত পরিসর খুলে গেছে এই সুযোগে। লকডাউনকালের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবে বলে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো শ্রেয়া।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper