ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সোহানের স্বাধীনতা দিবস

শেলীনা আকতার খানম
🕐 ৩:১৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২০

আজমল সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা। সরকারি চাকরিজীবি ছিলেন। অবসর জীবন যাপন করছেন এখন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। ডান পায়ে গুলি লাগাতে একটু খুঁড়িয়ে হাঁটেন। বয়সের ভারে শরীরটা নুয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে শরীর বেশ খারাপ হয়ে যায়। আজও ভালো লাগছিল না বলে বিছানায় শুয়েছিলেন। এ সময় সোহান দৌড়ে আসে। আজমল সাহেবের নাতি। আজমল সাহেবকে বলল, জানো দাদু, আজ আমার স্কুল বন্ধ।

-তাই নাকি! তাহলে তো খুব খুশির খবর! চঞ্চল স্বভাবের সোহান কথাটা বলেই বাড়ির পাশের খেলার মাঠে খেলতে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর মায়ের ডাক। খেতে হবে। মায়ের কথা শুনেও খেলায় মেতে থাকে সে। এবার দাদু আজমল সাহেব বিছানা ছেড়ে উঠে সোহানকে ডাক দেন। দাদুর ডাক শুনে দৌড়ে সোহান বাসায় আসে। সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। একে তো ভালো ছাত্র, কথায়ও পটু। স্যাররা তাকে বেশ পছন্দ করেন। নাস্তা খেতে বসে সে দাদুকে বলে, তোমাকে বলেছি না আজ আমাদের স্কুল বন্ধ! আসলে ঠিক বন্ধ নয়, খোলা। আজ কোনো ক্লাস হবে না। স্যাররা বলেছেন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হবে। তাই স্কুলে সবাইকে যেতেই হবে।

দাদু মুচকি হেসে বললেন, আজ স্বাধীনতা দিবস। তাই এ সব আয়োজন।

-স্বাধীনতা দিবস কী? স্বাধীনতা দিবস কেন হলো? সোহানের হঠাৎ এমন প্রশ্নে দাদু নড়েচড়ে বসেন। বুঝতে পারেননি, সোহান এমন প্রশ্ন করবে! তবে সোহানের জানার আগ্রহ দেখে খুশি হলেন।

-বলছি শোনো। মানুষের জীবনে সাধারণ কিছু চাহিদা থাকে। প্রত্যেক মানুষ সবকিছু নিজের মতো করে করতে চায়। এতে বাইরের কারো হস্তক্ষেপ আশা করে না। স্বাধীনতার বিষয়টি আপন-পর ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। স্বাধীনতা শব্দকে ভাঙলে আমরা পাই স্ব+অধীনতা। স্ব মানে নিজ বা আপন। যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কারও অধীন নয়।

সোহান দাদুর দিকে তাকিয়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়ে। সব কথা যে সোহান বুঝতে পারেনি, দাদু তা বুঝতে পারলেন।

দাদু সোহানকে আরেকটু কাছে ডেকে বসান। সহজ করে বলার চেষ্টা করেন- শোনো, একটা পাখি যদি খাঁচায় থাকে, সে কি ইচ্ছেমতো আকাশে উড়ে বেড়াতে পারবে! ইচ্ছেমতো কোথাও যেতে পারবে? খেতে পারবে? খেলতে পারবে? পারবে না। ঠিক তেমনি, বন্দি খাঁচায় কারও নজরে থাকার মতো অবস্থায় ছিলাম আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনে। বঙ্গবন্ধুর আহবানে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সে সময়ের এ পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। যুদ্ধে জয়লাভ হয় আমাদের। এ জয়ের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জিত হলো। আমরা পেলাম লাল সবুজের একটা পতাকা।

-আচ্ছা দাদু, একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস এগুলোও কি...?
-হ্যাঁ, এ সবকিছুই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
-আমার আব্বু যুদ্ধ করেননি?
-না, রে দাদু! তখন আমি বিয়েই করিনি। তোমার আব্বু তো ছিলই না।
কথা বলতে বলতে দাদু ও সোহান ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে আসে।

দাদু বলেন, আজ বিকালে আমাদের গ্রামের সংগঠনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমি অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবো। তুমি আমার সাথে যাবে। স্বাধীনতা দিবসসহ সব বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও বলার চেষ্টা করব। অন্যান্য বক্তার কাছ থেকেও অনেক কিছু জানতে পারবে।

দাদুর সঙ্গে বিকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যাবে শুনে সোহানের মনে খুশির বন্যা বয়ে যায়। খুশিতে আব্বু-আম্মুকে গিয়ে আনন্দের কথা জানায়। অপেক্ষার সময় গুনতে থাকে কখন বিকেল হবে, স্বাধীনতা অর্জনের কথা শুনবে!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper