ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মিডফিল্ডার মন্টু

রাশেদ আহমেদ
🕐 ১:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০

আমার বন্ধু মন্টু। চমৎকার ফুটবল খেলে। পড়াশোনায় ভালো। দেখতে শুনতেও মন্দ না। মাথায় একরাশ চুল। এই মন্টু আমার বন্ধু হলেও ওর সঙ্গে আমার একটা অকথিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। সে খেলায় ভালো, পড়ায় ভালো। পড়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যদিও ওর সঙ্গে আমার চরম জমে, খেলায় আমি কিন্তু একদম গাড্ডা। তাই খেলার ব্যাপারটা এক রকম মেনেই নিয়েছি। নিয়েছি বলতে নিতে হয়েছে। মন্টু মাঠ থেকে বল নিয়ে যখন দৌড় দেয়, সে এক দেখার মতো দৌড়। মন্টুর পায়ে বল মানেই আমাদের সমর্থকদের মধ্যে হইচই শুরু। মন্টু নামের জয়জয়কার।

মন্টুটাও যেমন, তীব্রবেগে দৌড়ের ওপরই সে এমনভাবে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ফাঁকি দিয়ে বলবারে বল ঢুকিয়ে দেয়, গোলটা যেন ওর পানিপান্তা। দিয়ে দিলেই হলো। কিন্তু গোলটা যে পানি বা পান্তা কোনটাই না, আমরা যারা একটু আধটু খেলি তারা হাড়ে হাড়ে টের পাই। মন্টুর সব ভালো ভালো গুণের যে ব্যাপারটা আমার একদম ভালো লাগে না, সেটা গাছে গাছে পাখি খুঁড়ে ফেরা। পাখির ছানা পেড়ে আনা। আর পালার নাম করে পাখির ছানাগুলোকে মেরে ফেলা। আচ্ছা, পুচকে পাখিটা মা ছাড়া থাকে কি করে!

ওতটুকু একটা ছানা পাখি। বাচ্চা পাখিটার জন্য মা পাখিটা ডালে ডালে উড়ে উড়ে কী কাঁদাটাই না কাঁদে!

দেখে আমার কান্না পায়। যেমন কান্না পায় মন্টুর কথা মনে করে। তবে যাই বলো, পাখির ছানা বাসা থেকে পেড়ে আনা একদম বাজে কাজ। বিপত্তিটা তো ঘটল এ নিয়েই।

সেবার আমাদের এখানে দশ গ্রামের ফুটবল টুর্নামেন্ট। আমাদের দলে এই আমিও আছি। কিন্তু আমাদের সব ভরসা ওই মিডফিলডার মন্টুটাই। কি খেলা তার!

কি তার পায়ের কাজ। একদম জাদু। দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেয়। বড়রা মন্টুকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে, দেখবে, এ একদিন অনেক বড় খেলোযাড় হবে।

মন্টুটা যেন কেমন। কোনো প্রশংসা সে কানে তুলবে না। কোন কথা ওকে ছুঁতে পারবে না। ও আছে ওর মতো। অথচ আমরা ওকে নিয়ে যেমন গর্বিত, একইভাবে ঈর্ষিত। এ নিয়ে ওর কোনো মাথা ব্যাথা নেই। টুর্নামেন্টের প্রতিটা খেলায় ওর অগ্রণী ভূমিকায় আমরা ফাইনালে ওঠে গেলাম। প্রতিটা খেলায় দেখা গেল, হয়তো সে গোল দিয়েছে, নয়তো গোল দেওয়ার মতো করে পাস দিয়েছে। একটু সমস্যা হয়েছিল সেমিতে গিয়ে। ওইদিন ওর টিয়ের ছানাটা মারা গেল।

ওর মন ভীষণ খারাপ। মারা যাবে না তো ঘোড়ার ডিম হবে! ওই টুকুন একটা বাচ্চা পাখি মা ছাড়া কি করে থাকে। মন খারাপ করে খেলতে নেমে খেলা একদম খারাপ খেলছিল মন্টু। প্রথম তো মনই দিতে পারছিল না। হাফ টাইম পার হলো। আমরা এক-শূন্য গোলে পিছিয়ে। নিশ্চিত হার এবং ফাইনাল থেকে বাদ। দর্শকদের মধ্যেও নেই সেই উৎসাহ।

হাফ টাইমের পর আবার আমরা খেলতে নামলাম। বলতেই হবে খোশ নবিস, এ সময় মন্টু তার আগের গতি ফিরে পেল। সেই একইভাবে পায়ের জাদু বলে ম্যাচটা জিতিয়ে দিল আমাদের টিমকে। দুই-এক গোলের ব্যবধানে আমরা জিতে গেলাম সেমিফাইনাল। ফাইনাল নিশ্চিত। সবাই খুশি মনে বাড়ি চলে গেলাম।

কিন্তু ফাইনালের দিন যা হলো, তা মনে হলে আজকেও আমার কান্না পাচ্ছে। আগামী কাল আমাদের ফাইনাল। মাঠে মাইক, সাউন্ড বক্স, খাওয়ার আয়োজন ছাড়াও এদিক ওদিক বসে গেছে ছোট ছোট টঙদোকান। যেন ছোট একটি মেলাই বসে গেছে। মাইকে কথা বলছে কেউ, সাউন্ড বক্সে চলছে গান। কে শুনে কার কথা। সকালেই ইস্কুল মাঠে একচোট প্র্যাক্টিস করে সবাই বাড়ি এসেছি। সবাই একসঙ্গে, মন্টুও ছিল। বিকেলে শুনি, মন্টু গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে!

আমি তো থ! দাঁড়ানো থেকে পড়ে যাই আর কি। কোন রকমে সামলে নিলাম। অবশ্য পরক্ষণে শুনলাম, না মরেনি, গুরুতর আহত হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পরের দিন ফাইনাল ম্যাচ আমরা খেলেছিলাম। হেরেও ছিলাম। হারা নিয়ে আমার কোন কষ্ট নেই। কষ্টটা হলো, মন্টু তার খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনাময় জীবন আর ফিরে পায়নি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper