ওরা পতঙ্গভুক উদ্ভিদ!
ফারুক হোসেন
🕐 ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় পড়েছ, উদ্ভিদের স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের উপায় হলো ‘সালোক সংশ্লেষণ’। কিন্তু শুনলে অবাক হবে, পৃথিবীতে এমন কিছু উদ্ভিদ আছে যাদের খাদ্য গ্রহণের ব্যবস্থাটাও একটু ভিন্ন। এরা পতঙ্গভুক উদ্ভিদ, ছোট ছোট পোকামাকড়- যেমন পিঁপড়ে, ফড়িং বা প্রজাপতি এগুলো ধরে খায়। এগুলো খেয়েই তারা তাদের দেহে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ করে। তবে তাদের খাবার সংগ্রহের জন্য এটাই কিন্তু একমাত্র উপায় নয়! বলতে পার, বাড়তি খানিকটা সুবিধা মাত্র, কেন না গাছগুলো সবুজ বলে সালোক সংশ্লেষের দ্বারা খাদ্য তৈরি করে নেয়।
পতঙ্গভুক উদ্ভিদের আবার নানারকম চেহারা রয়েছে। পোকামাকড় ধরার কৌশলটা থাকে তাদের পাতায়। পাতার চেহারায় থাকে নানারকম বৈচিত্র্য। আসলে গাছগুলো পোকামাকড় ধরার জন্য আশ্চর্য ফুলের মতো ফুটে থাকে। আর তাই দেখে পোকামাকড়গুলো আকৃষ্ট হয়ে কাছে এলেই ওরা খপ করে ধরে ফেলে, মানে ফুটন্ত পাতাটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর এক ধরনের রস বের করে গাছগুলো পোকামাকড়দের মেরে পরিপাক করে ফেলে! কলসপত্রী উদ্ভিদ বলে পরিচিত এক রকমের পতঙ্গভুক গাছ খাসিয়া, জয়ন্তিয়া ও গারো পাহাড় অঞ্চলে খুব দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্য কলসপত্রী গাছ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি নানা স্থানে অল্পবিস্তর দেখা যায়। গাছের প্রতিটি পাতার ডগায় এক একটি ছোট কলসির মতো চেহারা তৈরি হয়। আসলে পাতার নানা অংশই রূপান্তরিত হয়ে এই চেহারা সৃষ্টি করে। কলসিগুলোর মাথায় একটা করে ঢাকনি থাকে, যেগুলোর রঙ আবার সুন্দর গোলাপি! কলসির মুখটা খুব মসৃণ, আর ভেতরের দিকে থাকে গা-ভর্তি অনেকগুলো মোলায়েম ও তীক্ষ্ণ চুলের মতো জিনিস।
তাদের মুখগুলোর নিচের দিকে কিছুটা নামানো থাকে। কলসির ভেতরের গায়ে থাকে কতকগুলো গ্রন্থি, যা থেকে রস বের হয়ে কলসিটার খানিকটা ভরে থাকে। পোকামাকড় ঢাকনার গোলাপি রঙে আকৃষ্ট হয়ে এগিয়ে এসে বসতে গেলেই কলসির মুখ থেকে পিছলে ভেতরে পড়ে যায়! তখন আর দেয়ালের খাড়াই বেয়ে তারা উপরে উঠে আসতে পারে না। তারপর পোকামাকড়গুলো কলসির ভেতরকার রসে জীর্ণ হয়ে যায়! সাধারণত মাছিরা কলসির ভেতরকার মিষ্টি রস পান করতে গিয়ে মারা পড়ে। পরে খাদ্যে পরিণত হয়!
পৃথিবীতে কত রকমের যে পতঙ্গভুক উদ্ভিদ আছে তার কিন্তু সঠিক হিসাব নেই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-মালাক্কা ঝাঁজি, ব্লাডারওয়র্ট, ইউট্রিকুলারিয়া। পার্বত্য অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় পিংগুইকিউলা। শুনলে তো বন্ধুরা, পতঙ্গভুক উদ্ভিদদের কথা, ওরা কেমন অদ্ভুত আর বিস্ময় সৃষ্টি করে রেখেছে আমাদের এই পৃথিবীতে!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228