ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঠাকুরবাড়ি

শাহেদ জাফর হোসেন
🕐 ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৩, ২০১৯

বাসে উঠে প্রতিদিনের মতো ফাঁকা সিট দেখে বসে পড়ল রবিন। স্কুলে সে বাসে করেই যায়। রাস্তার চারপাশটা তার মুখস্থ। মাত্র বিশ মিনিটের পথ। বাসের ড্রাইভার, হেলপার সবাই তার পরিচিত হয়ে উঠেছে। ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই হেলপার মামা চিৎকার করে বলে, ওস্তাদ বাস থামান। ভাগনারে বাসে লই আগে।

একটু পর বাস থামলো পরের স্টপে। বেশ কয়েকজন যাত্রী উঠল সেখানে। একজন সাদা দাড়িওয়ালা বয়স্ক মানুষ এসে বসল রবিনের পাশে। কে বসল বসুক পাশে। প্রতিদিনই তো কত মানুষ বাসে উঠে-নামে। মা বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে বারবার করে বলে দেন অপরিচিত কোনো মানুষের সঙ্গে যেন

আগ বাড়িয়ে কথা না বলে। কেউ কিছু দিলে যেন না খায়। ছেলেধরারা প্রথমে ভাব তৈরি করবে তারপর চোখ খুলে দেখবে সে আর বাসে নেই। লঞ্চে বা জাহাজের ছাদে হাত বেঁধে তাকে শুয়ে রেখেছে। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। যদিও এর মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার ভাব আছে। কিন্তু রবিনের এসব ভাবতে ভালো লাগছে না। রবিনের মনোযোগ এখন জানালার বাইরে। শাঁ শাঁ করে কত রকমের গাড়ি আসা যাওয়া করছে রাস্তায়। মাঝে মাঝে থেমেও যাচ্ছে। রবিন তাকিয়ে তাকিয়ে তখন জ্যামে আটকে যাওয়া বাস, সিএনজি, প্রাইভেট কার দেখছে। একটু পর সেই বয়স্ক ভদ্রলোক রবিনকে উদ্দেশ করে বলল, খোকা একটু শুনবে?
-জ্বী, বলুন ।
-জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িটা কোনদিকে বলতে পারবে?
-জোড়াসাঁকো, সে তো রবি ঠাকুরের বাড়ি।
-হুম। তুমি রবি ঠাকুরকে চেনো?
-চিনিতো। আমাদের বাংলা বইয়ে তার কবিতা আছে। বিশ্বকবি তিনি। তার শেষের কবিতা বইটা বাবার বুক শেলফে দেখেছি।
-কোনো কবিতা পড়েছো তার?
-পড়েছি। তালগাছ আর বীর পুরুষ পড়েছি। আমাদের ক্লাসের বইয়ে ছিল। মুখস্থ বলতে পারব এখনো। আর আমাদের জাতীয় সংগীত তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই লেখা, প্রতিদিন আমরা এসেম্বলিতে গাই।
-বাহ্, অনেককিছুই তো জানো দেখছি। তা খোকা, সেই ঠাকুর বাড়িতে যেতে হলে কোথায় বাস থেকে
নামবো বলতে পারবে?
-ঠাকুর বাড়ি, সে তো কলকাতায়।
-হুম।
-কিন্তু এটা বাংলাদেশ আর ঠাকুরবাড়ি তো পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে। সেখানে যেতে হলে পাসপোর্ট করতে হয়, ভিসা পেতে হয়।
-উফ্। বাংলা আবার ভাগ হলো কবে? সেই কবে একবার ভাগ করতে চেয়েছিল ব্রিটিশরা। বাংলার মানুষের আন্দোলনের কারণে আর পারেনি। সেই বাংলাকে ভাগ করে ফেলল!
রবিন বুঝতে পারে না মানুষটা এত আফসোস করছে কেন। মানুষটা একনাগাড়ে বলেই চলল, বেড়ানোর জন্য কয়েকটা দিন সময় চেয়েছিলাম। পুরনো স্মৃতিগুলো খুব মনে পড়ছিল। বাড়িটা দেখতে চেয়েছিলাম। ওরা সদয় হয়ে কয়েকটা দিন মাত্র দিল। কিন্তু ওরা ভুল করে ফেলেছে আমাকে নামিয়ে দিতে! ভুল
জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলায় যাব বলেছিলাম। বাংলা যে ভাগ হয়ে গেছে আমি তো আর তা জানি না!
-তাই হবে। আমাদের ক্লাসটিচার কি বলে জানেন? ভুল করেই নাকি মানুষ শেখে।
-ঠিকই বলেছেন তোমার ক্লাসটিচার। কিন্তু এখানে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য তো মানুষরা ভুল করেনি!

রবিন কিছু বুঝতে পারল না ভুলটা তাহলে করল কে?
তবে তার কেন যেন মনে হচ্ছে, এই মানুষটিকে কোথায় যেন দেখেছে সে। কোথায় হতে পারে?
রবিন তালগোল পাকিয়ে ফেলল। বয়স্ক সাদা চুল দাড়ির মানুষটি ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। নেমে যাবেন হয়তো। তিনি বাস থামানোর জন্য হেলপারকে ইশারা করলেন। যেতে যেতে বললেন, তোমার নাম কী খোকা?
-রবিন। দাদু আপনার নামটা বলবেন প্লিজ?
মানুষটি বাস থেকে নেমে যেতে যেতে বলল, শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। া

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper