ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সুয্যিঠাকুর কেন আকাশে

সিদ্ধার্থ সিংহ
🕐 ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৯

এখন সুয্যিঠাকুর থাকেন আকাশে। আর সাগর থাকেন নিচে- পৃথিবীতে। আগে কিন্তু সুয্যিঠাকুরও পৃথিবীতেই থাকতেন। তার সঙ্গে সাগর মহারাজের ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। সুয্যিঠাকুর প্রায়ই সাগর মহারাজের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। কিন্তু সাগর মহারাজ কখনো তার বাড়িতে যেতেন না। এ জন্য সুয্যিঠাকুরের মনে দুঃখ ছিল। একদিন তিনি সাগর মহারাজকে বললেন, সাগর ভাই, তুমি আমার বাড়িতে বেড়াতে আসো না কেন? সপরিবার তুমি এলে আমি খুব খুশি হব।

সাগর মহারাজ বললেন, দেখো সুয্যি ভাই, আমার তো যাওয়ার খুব ইচ্ছে। কিন্তু আমি যদি পরিবারের সবাইকে নিয়ে তোমার বাড়ি যাই, তা হলে তুমি আমাদের থাকার জায়গা তো দূরের কথা, বসার জায়গাও দিতে পারবে না। সে জন্যই আমি যাই না। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না বন্ধু। 

তাই নাকি? ঠিক আছে, তা হলে তোমাদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করছি আমি।
বেশ, তাই করো। শুনেছি তোমার উঠোনটা খুব ছোট। সেটাকে একটু বড় করে দাও। তা হলেই আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে তোমার বাড়িতে যেতে পারব।

সুয্যিঠাকুর বললেন, ঠিক আছে, আমি সেই ব্যবস্থাই করছি।
সব ঠিক হয়ে গেলে আমাকে বোলো, আমি যাব।
সুয্যিঠাকুর বাড়িতে এসে তার বউ চাঁদ-ঠাকুরানিকে বললেন, গিন্নি, সাগর মহারাজকে নেমন্তন্ন করে এলাম। সে তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবে।
চাঁদ-ঠাকুরানি বললেন, সে তো খুব ভালো কথা।
কিন্তু একটু আসুবিধাও আছে।
কীসের অসুবিধা? চাঁদ-ঠাকুরানি জিজ্ঞেস করলেন।
মানে, আমাদের এই উঠোনটা তো খুব ছোট। সাগরের বাড়ির সবাই এলে জায়গায় কুলোবে কি?
বেশ তো, উঠোনটা বড় করে দাও।
তাই করব ভাবছি। সুয্যিঠাকুরও সায় দিলেন।

কোনো কাজ ফেলে রাখতে নেই। তাই তার পর দিন থেকেই সুয্যিঠাকুর উঠোন বাড়াতে শুরু করলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই একটা বিরাট উঠোন হয়ে গেল। সুয্যিঠাকুর ভাবলেন, এই বিরাট জায়গায় নিশ্চয়ই সাগর মহারাজের বাড়ির সবার জায়গা হয়ে যাবে।
তাই পরদিন সকালেই তিনি সাগর মহারাজের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন। বললেন, সাগর ভাই, আমার জায়গা তৈরি। তুমি তোমার বাড়ির সবাইকে নিয়ে কালকেই আমার ওখানে চলে এসো। দেখো ভাই, তোমার কোনো অসুবিধা হবে না তো? সাগর মহারাজ জিজ্ঞেস করলেন।
না না কোনো অসুবিধা হবে না। উঠোনের চারপাশে ঢিপি করে রাখা সমস্ত ভাঙাচোরা আবর্জনা সরিয়ে ফেলে আমি এত বড় করে তৈরি অসুবিধা।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। তা হলে কাল সকালেই সবাইকে নিয়ে আমি তোমার ওখানে যাচ্ছি।
পর দিন সকাল থেকেই সাগরের জল আসতে শুরু করল সুয্যিঠাকুরের উঠোনে। জলের সঙ্গে আসতে লাগল এত এত মাছ, সাপ, কুমির, কচ্ছপ এবং জানা-অজানা অজস্র জলজ জীব।
দেখতে দেখতে সুয্যিঠাকুরের উঠোনে হাঁটু জল জমে গেল। সাগর মহারাজ জিজ্ঞেস করলেন, কি ভাই, কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?
না না, কোনো অসুবিধা নেই।

তা হলে আসব?
নিশ্চয়ই আসবে। সুয্যিঠাকুর উত্তর দিলেন। সাগরের জল আসতে লাগল। আসতেই লাগল। সুয্যিঠাকুরের উঠোনে জল বাড়তে বাড়তে এক মানুষ সমান হয়ে গেল। সাগর মহারাজ বললেন, ও সুয্যি ভাই, এখনো আমার পরিবারের সবাই কিন্তু আসেনি। ঠিক করে বলো, আমি কি ওদের নিয়ে আসব?
নিশ্চয়ই আনবে।
সাগরের জল আসতে লাগল। আসতেই লাগল। জলের আর শেষ নেই। সুয্যিঠাকুরের বাড়িখানা প্রায় ডুবুডুবু। তিনি আর তার বউ চাঁদ-ঠাকুরানি বাড়ির ছাদের ওপরে গিয়ে উঠে বসলেন। চার পাশে তখন শুধু জল আর জল! সাগর মহারাজ জিজ্ঞেস করলেন, ও ভাই সুয্যি, আমাদের সবাই কিন্তু এখনো আসেনি। আমরা কি আসব?
কেন আসবে না? নিশ্চয়ই আসবে। জল আসতে লাগল। আসতেই লাগল। দেখতে দেখতে সুয্যিঠাকুরের ছাদও জলের তলায় চলে গেল। ডুবে গেল সুয্যিঠাকুরের পা, কোমর, বুক, গলা। যখন মুখ-নাকও এই ডোবে কি সেই ডোবে, তখন সুয্যিঠাকুর তড়াক করে লাফিয়ে আকাশে উঠে গেলেন। চাঁদ-ঠাকুরানিও থাকতে না পেরে উপরে লাফ দিলেন। সুয্যিঠাকুরের পিছু পিছু তিনিও চলে গেলেন আকাশে।

সেই থেকেই সুয্যিঠাকুর আর চাঁদ-ঠাকুরানি আকাশেই থাকেন। ওই অভিজ্ঞতার পরে সাগর মহারাজের সঙ্গে মিতালি করার জন্য তারা আর আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেননি।
আর কোনো দিন আসবেন বলেও মনে হয় না।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper