ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বৃক্ষপ্রেম

কবির কাঞ্চন
🕐 ২:৩২ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০১৯

মা আমার চারাগাছগুলো কোথায় রেখেছো? ওগুলো জলদি আমায় দাও। আমার জন্য জীবন দাঁড়িয়ে আছে।’ কথাগুলো বলতে বলতে কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগটা নামিয়ে পড়ার টেবিলের ওপর রেখে মায়ের কাছে চলে আসে বাসান।

শিরিন বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, কিরে এত তাড়া কিসের? সবেমাত্র স্কুল থেকে ফিরেছিস। আগে হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। তারপর চারাগাছ রোপণ করিস। তখন তোর সঙ্গে আমিও যাব।

বাসান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, ঠিক আছে, মা। তাহলে আমি জীবনকে বিদায় জানিয়ে আসি।

জীবন এখন কোথায়?
আমাদের উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। স্কুল ছুটির পর আমি ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম আমরা দুজনে চারাগাছগুলো রোপণ করব। এখন তুমি যখন বললে...

একি কথা! এমন গরমের মধ্যে জীবন উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে কেন? আগে গিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে আয়।

মায়ের অনুমতি পেয়ে বাসান এক দৌড়ে গিয়ে জীবনকে ঘরে আসবার আমন্ত্রণ জানায়। জীবন শুরুতে ইতস্তত করলেও বন্ধুর বিশেষ অনুরোধে বাসানের পিছু পিছু ঘরে ফিরে আসে। বাসানের মা বাসান ও জীবনকে নিজ হাতে দুপুরের খাবার খাওয়ালেন। খাবার খেয়ে দুই বন্ধু বাসানের পড়ার রুমে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়।

বাসান ও জীবন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। আর মাত্র কয়েক মাস পর তাদের পিএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। ক্লাসের সবার মধ্য থেকে জীবনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এর একটাই কারণ। বাসানের মতো জীবনও গাছপালা ভালোবাসে। গাছ লাগানোর ব্যাপারে স্কুলের সেজান স্যারের পর যে তাকে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে সেই জীবন। জীবনের নিজের হাতে গড়া ফুলবাগানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাসানের বৃক্ষপ্রেমী হওয়া।

একটু পর বাসানের মা বাসান ও জীবনকে ডেকে তাদের ঘরের পেছনের দিকে নিয়ে আসেন। দুজনের হাতে দুটি করে চারাগাছ তুলে দিয়ে তিনি কিছু পানি ও প্র?য়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বাড়ির পেছনের দিকে এগোতে লাগলেন। বাসানদের বাড়ির পেছনের পুকুরটির পাড় সংলগ্ন বেশকিছু জমি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। সেখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সযতনে চারাগাছগুলো রোপণ করা হলো। প্রত্যেকটি চারাগাছের পাশে বাসানের নিজ হাতের লেখা গাছগুলোর পরিচিতি ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। এরপর জীবন বিদায় নিয়ে চলে গেলে বাসানও মায়ের পিছু পিছু বাসায় ফিরে আসে।

বাসানের নিয়মিতভাবে পরিচর্যায় মাত্র কয়েকদিনেই চারাগাছগুলো তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। বাসান রোজ স্কুলে যাওয়ার আগে একবার চারাগাছগুলোতে পানি দেবে। আবার স্কুল থেকে ফিরে এসে চারাগাছগুলোর খুব কাছে দাঁড়িয়ে প্রাণভরে দেখবে। পাশে কোনো আগাছা জন্মাতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা নির্মূল করে দেবে। কখনো মায়ের সঙ্গে আবার কখনো বাবার সঙ্গে তার চারাগাছ নিয়ে গল্প করবে। ছেলের এমন বৃক্ষপ্রেম দেখে বাবা-মা দুজনে মনে মনে খুশি হন। সুযোগ পেলেই বাসান বাবার কাছে চারাগাছ কিনে দেওয়ার বায়না ধরে বসে।

বাবাও না করেন না। ছেলের পছন্দমতো বিভিন্ন জাতের চারাগাছ কিনে আনেন। বাসান বাবার কাছ থেকে নতুন চারাগাছ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। দিন দিন বাসানের চারাগাছগুলো বড় হতে থাকে।

এভাবে দিন যায় মাস আসে। আবার মাসের পর বছরও চলে যায়। বাসানও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যায়।

এ বছর সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। দিন দিন তার বাগানের পরিসীমা বেড়েই চলেছে। বিশালাকৃতির বাগানের চারপাশে শক্ত বেড়া দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সার্বক্ষণিক কাজের জন্য দুইজন লোকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এখন নিজের বাগানের ফল খেয়ে কিছু ফল বিক্রিও করতে পারছে। এলাকার লোকজনরা সুযোগ পেলেই তার ফুলবাগানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে এখানে ছুটে আসেন। তাছাড়া ভেষজগাছগুলো থেকে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য কিছু অংশ নিতে আজকাল এলাকার লোকজন প্রায় বাসানের কাছে ছুটে আসেন। সে নিজ হাতে বাগানের ঔষধি গাছের পাতা, বাকল ইত্যাদি ছিঁড়ে দেয়। এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে তার ভালো লাগে।

এলাকায় সবুজ বিপ্লব গড়ে তোলার কারণে বিভিন্ন মিডিয়ার লোকজন তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ছুটে আসেন। ছেলের এমন সাফল্যে বাসানের বাবা খুব বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আজকাল একটু সময় পেলে তিনি প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে ছেলের বাগানে সময় দিতে ছুটে আসেন। বাবা-মাকে একসঙ্গে বাগানে হাঁটতে দেখে বাসানের মন আনন্দে ভরে ওঠে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper