ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আমাদের টুকোনটা

রাশেদ আহমেদ
🕐 ১২:৫২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০১৯

টুকোন আমাদের ইস্কুলে পড়ত। লম্বা চুল, বড় বড় চোখ। ভ্রুটা চোখের ওপর সব সময় তীক্ষন হয়ে ঠেলে থাকত। টুকোনের আগমন হঠাৎ করেই। ঠিক আকাশ ফেটে পড়ার মতো। এসেই পুরো ইস্কুলটা নিজের মুঠোয় করে নিল। কেউ ছিল না ওর সমকক্ষ বা প্রতিপক্ষ। তবে আমার ব্যাপারটা ছিল কিছুটা আলাদা।

 

ক্লাসে আমার রোল এক। বাবা এই মফস্বল থানার ইন্সপেক্টর। স্বাভাবিক কারণেই সবার নজর আমার প্রতি। সেখানে কে এক বাউণ্ডুলে এসে হাজির হলো। পুরো ইস্কুলের সবার দৃষ্টি এমনভাবে কেড়ে নিল, আমি যেন কিছুই না। মিথ্যে বলব না, প্রথমে ওকে ঈর্ষা করতেই শুরু করেছিলাম।

এসেই সে একটা নতুন কথা পাড়ল। দেয়ালিকা হবে! শুনেই আমাদের চক্ষু চড়ক গাছ। বলে কী এই ছেলে? দেখা গেল, শেষ পর্যন্ত দেয়ালিকা করেই ছাড়ল টুকোন। এই নগণ্যেরও একটা গল্প ছাপা হলো। সেটাই ছিল আমার প্রথম লেখা আর লেখক হওয়ার প্রথম প্রেরণা। আজ অবাক হয়ে ভাবছি, কোথায় আমাদের টুকোন? কোথায় হারিয়ে গেল ও?

তবে ওর কর্মযজ্ঞে আমি অংশগ্রহণ শুরু করি আরও পরে। যখন ইস্কুলে ও চারটা মঞ্চনাটক করে ফেলেছে। বিতর্ক প্রতিযোগিতার আসর জমিয়ে ফেলেছে। দাবা, ফুটবল, ক্রিকেট এবং হা-ডু-ডু খেলার রেওয়াজ চালু করে ফেলেছে। সত্যি কথা বলতে কী, আমি কেবল ওর তৈরি ক্ষেতের ফসলটা তুলেছি নিজের ঘরে। পঞ্চম নাটকে আমি অংশ নিই। ওটা ছিল সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ‘সুড়ঙ্গ’।

আমার সাহিত্যের পাঠও ওর হাত ধরেই শুরু। তার আগে ক্লাসের বইয়ের বাইরে দু’-একটা কমিক বই ছাড়া কিছুই পড়া হয়নি। সুড়ঙ্গ পড়েছিলাম নাটকে অংশগ্রহণের জন্য।

তো টুকোনের সঙ্গে এক সময় আমার বেশ ভাব জমে গেছে। ওর হাত ধরে বেশ কিছু বইও পড়ে নিয়েছি। তার মধ্যে ছিল দ্য কাউন্ট অব মন্টি ক্রিস্টো, ডাকঘর। একদিন টুকোন বলে কী, রাশু, আমরা নেক্সট নাটকটা করতে যাচ্ছি। আমি বললাম, আচ্ছা। কিন্তু এরপর ও যা বলল এবং যেভাবে বলল তা আমি কোনো দিন ভুলব না। ‘রাশু, নাটকটা তুই লিখে ফেল। চার দিনের মধ্যে। কারণ পনেরো দিনের মধ্যে নাটকটা মঞ্চস্থ করব। জ্যৈষ্ঠের ছুটি উপলক্ষে।’ আমি কেন জানি না, সেটা কী ওর সম্মোহন নাকি কথার তোড়ে কে জানে- বললাম, ‘আচ্ছা’।

আজকে ভাবলেও ভালো লাগে সে দিন আমি ‘আচ্ছা’ বলেছিলাম। কিন্তু আচ্ছা বলে তো আর বসে থাকলে হয় না। নাটকটা লিখলাম। সেই প্রথম পেলাম লেখকের একাকিত্বের অভিজ্ঞতার আস্বাদ। নাটক যখন ওর হাতে দিলাম, দেখে তো ও চটেই গেল। কেন চটেছিল সেটা আজও খুঁজে পাইনি। ছুটির দিন এসে গেছে। নাটকের মহড়ায় আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। হঠাৎ একদিন মহড়ার রুমে এসে আমরা সবাই তাজ্জব বনে গেলাম। সবাই মিলে অবিশ্বাসের সুরে বললাম, টুকোন কোথায়? দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমি প্রচণ্ড রেগে গেলাম ওর ওপর। ওর ওপর ওটাই আমার প্রথম আর শেষবারের মতো রাগ। ‘এই সব অলসদের দিয়ে কী হবে?’-আমি বললাম। আজ ভাবছি, কেন আমি ওকে ওমন কথা বলতে গেলাম!

টুকোন যেমন হঠাৎ করে আকাশ ফেটে পড়েছিল, তেমনই এক জ্যৈষ্ঠের বন্ধের আগে হঠাৎই উধাও হয়ে গিয়েছিল।

কোথায় গেল? কেনই বা গেল, তার কিছুই আমি জানতে পারিনি। অনেক বছর পর অমল স্যারের কাছে শুনছিলাম, ওর বাবা ছিল সরকারি কর্মকর্তা। চাকরির সুবাদে এসেছিল, আবার চাকরির সুবাদে চলে গেছে। নিয়ে গেছে টুকোনকে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper