ঢং-ঢং ‘ছুটির ঘণ্টা’
রাশেদ আহমেদ
🕐 ১২:২১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৬, ২০১৯
১৯৮০ সাল। রিলিজের পরপর সারা দেশের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে অতি প্রিয় হয়ে ওঠা ছবি ছুটির ঘণ্টা। সিনেমার ট্র্যাজিক কাহিনী, ক্যামেরার কারুকাজ আর চরিত্রগুলোর নিপুণ অভিনয়সহ সংলাপ, বেগ্রাউন্ড সাউন্ড- সবকিছুর সমন্বয়ে সিনেমাটি বাংলা সিনেমা অঙ্গনের একটি অনবদ্য সৃষ্টি।
সিনেমাটির শুরু একজন মানসিক রোগীকে দিয়ে। মানসিক হাসপাতালে খাবারের ঘণ্টার আওয়াজে যে অস্থির হয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। দিগি দিক ছোটাছুটি করে চিৎকার করে সে ঘণ্টা বাজানো বন্ধ করতে বলে এক মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী আব্বাস মিয়া। কেন? এখানেই লুকিয়ে আছে সিনেমাটির বেদনাময় কাহিনীর ঘনঘটা। ঢাকা শহরে নিজ বাড়িতে একমাত্র কিশোর ছেলে খোকনকে (মাস্টার সুমন) নিয়ে মিসেস খান (সুজাতা) বসবাস করেন। খোকন ঢাকা শহরের একটি স্কুলে পড়ে। হাসিখুশি চঞ্চল ও উচ্ছল কিশোর খোকনকে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা খুব পছন্দ করে। সেই স্কুলের দপ্তরিই আব্বাস মিয়া মানে রাজ্জাক আর ঝাড়ুদার আঙ্গুরি বেগম মানে শাবানা।
সেটা স্কুল ছুটির দিন। খোকনের ভালো লাগছে না। মন টানছে না স্কুলে যেতে। মা ছেলেকে আদর করে বুঝিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিল। স্কুলে শিক্ষক যখন পড়াচ্ছিল- ‘মরিতে চাই না আমি সুন্দর ভুবনে’। তখনই ছুটির নোটিস এলো। শিক্ষক ছুটির কথা জানিয়ে দিতেই ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল। ১১ দিনের ছুটি, তাই ছাত্র, শিক্ষকসহ সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। খোকন চলে এলো ওর প্রিয় দপ্তরি চাচার কাছে, তাকে একটি নতুন জামা দিয়ে বিদায় নিল।
ওর গাড়ি আসতে আজ দেরি হচ্ছে। বন্ধু পিকলু, রবার্ট, গণেশ ওকে গাড়িতে উঠিয়ে বিদায় জানাতে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু গাড়ি আসতে দেরি হওয়ায় খোকনই ওদের ট্যাক্সিতে উঠিয়ে বিদায় জানাল। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সে স্কুলের টয়লেটে গেল। এদিকে দপ্তরি আব্বাস মিয়া অন্যদিনের মতোই স্কুলের সব কক্ষ এবং টয়লেটে তালা মেরে দিল। খোকন বাথরুমের আটকা পড়ে গেল। তারপর কি হলো? তারপর কি হলো, তা জানার জন্য তো তোমাকে ছবিটি দেখতে হবে।
তবে তার আগে ছবিটি নিয়ে আরেকটি মজার তথ্য জেনো রাখো। ছবি মুক্তির আগে সেন্সর বোর্ড ছবির মুক্তি নিয়ে বেজায় ঝামেলা বাধিয়ে দিল। তাদের মতে, এই ছবি দেখলে তোমরা ভয় পাবে, তোমাদের ওপর বাজে প্রভাব পড়বে। পরিচালক আজিজুর রহমান তো মহাফাপড়ে পড়ে গেলেন। তখন তিনি একটা বুদ্ধি বের করলেন। ছবির একটা বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন, যেখানে বেশিরভাগ শিশুকে দাওয়াত করা হলো তাদের বাবা-মাসহ। কিন্তু ছবি শেষে দেখা গেল, শিশুরা ভয় পাবে দূরে থাক, উল্টো চোখ মুছতে মুছতে হল থেকে বের হচ্ছে, এমনকি অভিভাবকরাও। এরপরে এই ছবির মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকল না।
ঢং-ঢং-ঢং! তো বন্ধুরা, আর দেরি কেন? ঘণ্টা বেজে গেছে। দ্রুত বসে যাও আর চেখে নাও ছুটির ঘণ্টা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228