গঙ্গাফড়িং তার হাত দুটো ওপরের দিকে তুলে মুখের এমন ভঙ্গি করে যেন মনে হয় সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে! কিন্তু হালকা সবুজ রঙের এই পোকাটা যতই সাধুর মতো হাত ওপরে তুলে প্রার্থনা করার ভাণ দেখাক না কেন, আসলে সে হলো শয়তানের একশেষ। যে হাত তুলে সে ‘প্রার্থনা’ করছে, ওটা হচ্ছে তার মারাত্মক অস্ত্র, সামনে পড়লে আর রক্ষা নেই। গঙ্গাফড়িং একদৃষ্টিতে শিকারের দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে কাবু করে ফেলে, তারপর খপ করে সামনের হাত দুটো দিয়ে তাকে চেপে ধরে খেতে শুরু করে দেয়। সামনের হাতে করাতের দাঁতের মতো কাঁটা থাকায় শিকার কোনোমতেই পালিয়ে যেতে পারে না। বিড়াল যেমন ওঁত পেতে পাখি ধরে, ঠিক সেই রকম গঙ্গাফড়িং গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে শিকার ধরে।

গঙ্গাফড়িংয়ের মতো হিংস্র প্রাণী খুব কমই আছে। স্ত্রী গঙ্গাফড়িং, এমন কী, নিজের স্বামীকে পর্যন্ত সে খেয়ে ফেলে। স্নেহ, মায়া-মমতা অথবা ভালোবাসার কোনো বালাই এদের নেই। হাত জোড়া করে প্রার্থনা করার ভঙ্গি দেখায় বলে এর নাম প্রেয়িং ম্যানটিস।

স্ত্রী গঙ্গাফড়িং একসঙ্গে অনেকগুলো ডিম পাড়ে। তারপর শরীর থেকে আঠার মতো একধরনের জিনিস বের করে সেটা দিয়ে প্রত্যেকটা ডিমকে ঢেকে দেয়। এর ফলে ওই আঠার ক্যাপসুলের ভেতর ডিমটি বেশ নিরাপদে থাকতে পারে। ডিম থেকে বাচ্চা বেরুলে তাদের অনেকটা পিঁপড়ের মতো দেখায়, এ সময় ডানা গজায় না। পাখি, টিকটিকি, গিরগিটি- এরা হচ্ছে গঙ্গাফড়িংয়ের প্রধান শত্রু। তাই সাবধানে সে তাদের এড়িয়ে চলে।

গঙ্গাফড়িংয়ের বাসাটি কিন্তু বেশ সুন্দর। রোদ, বৃষ্টি লাগে এমন জায়গাতেই সে তার বাসা তৈরি করে।

গঙ্গাফড়িংকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। এখনো অনেকে ভুল করে বিশ্বাস করে এই পোকার মুখের রস চোখে গেলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। কেউ কেউ মনে করে গরু-বাছুর ঘাস খাওয়ার সময় যদি কোনোক্রমে গঙ্গাফড়িং খেয়ে ফেলে, তবে সে নিশ্চিত মারা পড়বে। আমাদের দেশে অনেকে মনে করে, ছোট ছেলে হারিয়ে গেলে যদি গঙ্গাফড়িংকে দেখতে পায়, তবে সে হাত তুলে কোন পথে যেতে হবে তা বলে দেয়।