ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রিজুর লাল সাইকেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০১৯

 

বন্ধু সজীবের লাল সাইকেলটা দেখে এক প্রকার হিংসেই হয় রিজুর। রোজ রোজ ওকে একা একা রিকশায় চেপে আসতে হয়। রিকশাগুলোও আবার এত আস্তে চালায় যে, রিজুর বিরক্তির সীমা চরমে পৌঁছে। ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে আবার দুষ্টু সজীব ওর রিকশাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে যায় জোরে সাইকেল হাঁকিয়ে। লাল সাইকেলে রোদ পড়লে চকচক করতে থাকে। সজীবের এঁকেবেঁকে স্ট্যাইল করে সাইকেল চালানো রিজুকে হিংসেয় ফেলে। নিজের একটা সাইকেল না হলে যেন হয়-ই না।

সেদিন বাসায় এসে বাবাকে অনেক অভিমানের সুরে বলে,
‘বাবা, রোজ রিকশায় করে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে আমার একদম ভালো লাগে না।’
‘কেন ভালো লাগে না বাবা?’
‘কেমন যেন মেয়ে মেয়ে লাগে নিজেকে। মেয়েরা রিকশায় চড়ে স্কুলে যায়। আমি কি মেয়ে?’
বিরক্তি নিয়ে বলে রিজু। বাবা ওর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে স্নেহের স্বরে প্রশ্ন করে,
‘তাহলে তুই কী চাস বাবা?’
‘একটা লাল টুকটুকে রেঞ্জার সাইকেল।’
মনের ভেতরে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে প্রচ-ভাবে পেয়ে বসে ওকে।
‘কিন্তু তুই তো সাইকেল চালাতে পারিস না। স্কুলে যাবি কীভাবে?’
‘সেটা আমি শিখে নেব। তুমি আগে কিনেই দাও তো!’
ছেলের এমন আবদারে না করতে পারে না রিজুর বাবা। সামনের মাসে বেতন পেলে ওকে একটা চকচকে সাইকেল কিনে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। রিজু অনেক খুশি হয়ে পরদিন স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের গল্প শোনাতে থাকে যে, তার বাবা তাকে খুব সুন্দর একটা সাইকেল কিনে দেবে। বাসায় ঘুমোনোর সময়ও চোখ বুজে সে সাইকেলের স্বপ্ন দেখতে থাকে। একসময় স্বপ্ন সত্যি হয়।
প্রতিদিন খুব যতœ করা সাইকেলটার যে এই অবস্থা হবে বিশ্বাসই করতে পারে না রিজু। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘সব ওই বদমাশ সজীবের কাজ বাবা। আমার সাথে সাইকেল চালিয়ে পারে না বলেই ও এরকম করেছে। কাল আমিও চুপ করে ওর সাইকেলের বারোটা বাজাব।’
ভীষণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে রিজু। বাবা সরল হাসি হেসে বিজ্ঞদের মতো বলে, ‘না রে বাবা। এ রকম কখনো করবি না। এ রকম করা পাপ।’
‘কেন বাবা? ও তো ঠিক-ই আমার সাইকেলটা নষ্ট করেছে। আমি করতে দোষ কোথায়?’
‘কেউ দোষ করলে তার ক্ষতি করে কোনো লাভ হয় না। পাল্টা সেও আবার তোর ক্ষতি করবে। বরং তার ভুলটা শুধরে দিয়ে ভালোবাসার সাথে বরণ করলেই সে তার ভুল বুঝতে পারবে। বুঝলি বাবা?’
‘বুঝলাম।’
‘কাল তুই সজীবের সাথে একদম খারাপ ব্যবহার করিস না। উল্টো ভালো ব্যবহার করবি। দেখবি ও ঠিক লাইনে চলে এসেছে।’
‘আচ্ছা বাবা।’ ভদ্র ছেলের মতো জবাব দেয় রিজু।
পরদিন স্কুলে এসে রিজুর ব্যবহারে সবাই অবাক। সবাই প্রত্যাশা করেছিল রিজু হয়তো এক ঘুষিতে সজীবের নাক ফাটিয়ে দেবে। অথবা সজীবের সাইকেলের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। কিন্তু এরকম কিছুই করল না রিজু। সবার সাথে এমন ব্যবহার করতে লাগল যেন কিছুই হয়নি। সজীবকে জোরে ডাক দিয়ে কাছে আসতে বলে। সজীব কি করবে বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করতে করতে কাছে আসে। রিজু ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,
‘কেমন আছিস দোস্ত?’
সজীব রীতিমতো ভয়ে অস্থির। কাঁচুমাচু করতে করতে বলে,
‘এই তো ভালো।’
‘তুই-ই আমার সাইকেলটার বারোটা বাজিয়েছিলি, না?’
‘ইয়ে আরকি...মানে...’
‘হা হা হা হা। আরে বোকা এত ভয় পাচ্ছিস কেন? বন্ধু বন্ধুর বারোটা বাজাবে না তো কে বাজাবে? হা হা হা হা।’
রিজুর হাসিতে সজীব কিছুটা ভড়কে গেলেও ধীরে ধীরে বুঝতে পারে ওর নিষ্ঠুর কাজটার জন্য রিজু একদমই খ্যাপা না ওর ওপর। তাই একটু সহজ হয় সজীব। রিজু বলে, ‘আমার বাবা বলেছে, যে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে তার সাথে ভালো ব্যবহার করতে। যে ক্ষতি করবে তার উপকার করতে। তাহলেই তার উচিত শিক্ষা হবে। তুই তো আমার ক্ষতি করলি সাইকেলটা নষ্ট করে। কিন্তু আমি তোর ক্ষতি না, বরং উপকার করব। তোর কালকের হোমওয়ার্কটা আমি করে দেব। কী বলিস?’
সজীব যেন নিজের ভুল বুঝতে পারে। ভীষণ অনুতপ্ত হয় ও। প্রচ- কান্না পায়। নিজেকে সামলাতে না পেরে সবার সামনে বোকার মতো ভ্যাত করে কেঁদে ওঠে রিজুকে বলে, ‘আমারে মাফ করে দিস রে বন্ধু। আমি এ রকম আর কখনো করব না। কারও ক্ষতি করব না। উল্টো কেউ আমার ক্ষতি করলে উপকার করে তার ভুল ভাঙাব।’
রিজু বড়দের মতো করে বলে,
‘সত্যি?’
‘তিন সত্যি।’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper