ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গল্প

অবিশ্বাসের পরিণতি

অমৃত ফরহাদ
🕐 ১২:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০১৯

- ফালতু বিষয় নিয়ে গল্প করা, সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
- এটা ফালতু বিষয় নয় আবির।

 

ফাহিমের আহত কণ্ঠস্বরের জবাব। ফাহিম, রিফাত আর আবির তিন জন খুব ভালো বন্ধু। তারা এক জায়গায় বসলে অতৃপ্ত আত্মা, পিশাচ, জিন-পরী এসব বিষয় চলে আসে। ফাহিম এসবে বিশ্বাসী হলেও আবির কিন্তু ঘোর বিরোধী। ফাহিম-আবির বিতর্ক করে আর শ্রোতা হয়ে তা মনোযোগ সহকারে শোনে রিপাত। ফাহিম আর রিফাতের বাসা স্কুলের পাশে হলেও আবিরের বাসা প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। আবিরের বাবার অনেক টাকা। তাই ছেলের বায়না মেটাতে তাকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয়। কিন্তু শিক্ষকের ভয়ে মোটরসাইকেল স্কুলে না নিয়ে ফাহিমদের বাসায় রেখে দেয় এবং তিনজন একসঙ্গে হেঁটে বিদ্যালয়ে যায়। যেতে যেতে তাদের অধিকাংশ আলোচনার বিষয় থাকে অশুভ কোনো এক ঘটনা। বিষয়গুলো নিয়ে তাদের মাঝে প্রায় খুনসুটি লেগেই থাকে। ক্লাস শুরুর আগে এবং লাঞ্চ বিরতিতেও চলে তাদের এ আলোচনা। ফাহিমের এসব গল্পে আবির রীতিমতো বিরক্ত। তাই সে ফাহিমকে মাঝে মাঝে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে। ফাহিম সেটাকে সত্য হিসেবে নিয়ে শিউরে ওঠে। ফাহিমের এ অবস্থা দেখে আবির হাসতে হাসতে পাগল বলে গল্পের সমাপ্তি ঘটায়।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালের কথা। সন্ধ্যার পর। তিন বন্ধু চা স্টলে। আড্ডা চলছে। বিষয়- অশুভ আত্মা এবং পিশাচ। এক পর্যায়ে আবির নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে রাগ করে চলে যায়। উদ্দেশ বাড়ি। বাইকের গতি ৬০ থেকে এক লাফে ৯০। তারপর বাড়তে বাড়তে ১২০। পাগলের মতো টানছে সে। আর ফাহিমের আজগুবী গল্পগুলো নিয়ে ভাবছে। ভাবছে তার প্রিয় বন্ধুটি মনে হয় শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে যাবে। তাকে এসব থেকে ফেরাতেই হবে, কিন্তু কীভাবে? এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কোথায় থেকে যেন একটি কালো বিড়াল রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। বিড়ালকে সাইড দিতে গিয়ে আবির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। বাঁ হাতটি ভেঙে যায়। দুই পা ছিলে যায়। মাথায় হেলমেট থাকায় মাথায় আঘাত পায়নি। পথচারীরা এগিয়ে আসে আবিরকে সাহায্য করতে। লোকজন জানতে চায় পরিষ্কার রাস্তায় সে পড়ে গেল কীভাবে? আবিরের সংক্ষিপ্ত জবাব, বিড়ালকে সাইড দিতে গিয়ে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই আবির জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
খবর পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে আসে। অবস্থা খারাপ দেখে তাকে জেলা সদর হসপিটাল রেফার করা হয়।
বন্ধুর অ্যাকসিডেন্টের খবর রিফাত আর ফাহিম পর দিন সকালে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে তারা ছুটে যায় হাসপাতালে। বন্ধুদের দেখে সে কেঁদে দেয় এবং ফাহিমের হাত ধরে বলে, তোদের ওপর রেগে গিয়ে আমি অন্যায় করেছি। তোরা আমাকে মাফ করে দে।
-দূর বোকা, বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাইতে হয় না। ফাহিমের জবাব। আবির কীভাবে অ্যাকসিডেন্ট করলো বন্ধুদের কাছে সব বলল। তারা তিনজন গল্প করছে। এমন সময় আবিরের বাবা রুমে ঢোকে। রিফাত আর ফাহিম দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।
-কেমন আছ তোমরা?
-জি, ভালো।
আবিরের বাবা তাদের বসতে বলে নিজেও বিছানার এক কোণে বসে পড়ে। বসতে বসতেই ছেলেকে উদ্দেশ করে বলে, আবির কাল রাতে তুমি চিৎকার করে উঠলে কেন?
-বাবা, আমি ঘুমের ঘোরে দেখতে পাই রাস্তার সে কালো বিড়ালটা আমার বিছানার পাশে এসে বসলো। হঠাৎ দেখলাম সে দু’পায়ে দাঁড়িয়ে।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম তাকে অনেকটা বন মানুষের মতো লাগছে। কিছুক্ষণ পর পর তার ধরন পাল্টাচ্ছে। এক সময় দেখলাম তার দেহের তুলনায় হাতগুলো অস্বাভাবিক লম্বা। বিশাল বিশাল নখ, হাতের লোমগুলো বেশ বড়। এক কথায় ভয়ঙ্কর এক প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper