গল্প
প্রতিদান
অনার্য মুর্শিদ
🕐 ১২:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৯, ২০১৯
চারদিকে সাজের ধুম। আকাশে বাতাসে উৎসবের গন্ধ। আজ বাদে কাল নতুন বছর। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে দাদু আর দিদিমার মন খুব খারাপ হচ্ছে। খারাপ হবে নাইবা কেনো? নতুন বছর এলে তো কিছু না কিছু কেনাকাটা করতেই হয়।
দিদিমা ঘরে গিয়ে একটা জামদানি কাপড় বের করে আনল। অনেকদিন আগে দিদিমা এটা নিজ হাতে বুনেছিল। কাপড়টা বিক্রি করতে পারলে কিছু পয়সা পাওয়া যাবে। তা দিয়ে নতুন বছরের কেনাকাটা হয়ে যাবে। দিদিমা কাপড়টা দাদুর হতে তুলে দিয়ে বললো, ‘বাজারে গিয়ে দেখো বিক্রি করতে পারো কিনা।’
দাদু কাপড়টা নিয়ে বাজারে গেলো। তারপর কাপড়টা কাঁধের ওপর মেলে সারাটা বাজার ঘুরলো। যাকেই সামনে পায় তাকেই ধরে বলে, ‘কাপড়টা নাও না ভাই, অনেক ভালো কাপড়, আমার বুড়ি নিজ হাতে বুনেছে। কিন্তু কেউ কিনলো না।’
সারা বাজার ঘুরে দাদু হাঁপিয়ে উঠেছে। গলাও শুকিয়ে কাঠ। দাদু এক জায়গায় ধপ করে বসে পড়লেন। সামনে দিয়ে যাচ্ছিল এক টুপিওয়ালা। দাদু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কটা টুপি বিক্রি হলো তোমার?’ টুপিওয়ালা বললো, ‘একটাও না। তুমি কটা কাপড় বিক্রি করলে?’ দাদু হেসে বললো, ‘আমার তো একটাই কাপড়। কেউ-ই নিতে চাইলো না।’
টুপিওয়ালা দাদুর দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে দেখলো। কাপড়টা খুব সুন্দর। ক্রেতাকে বুঝাতে পারলে অনেক চওড়া দামে বিক্রি করা যাবে। সে বললো, ‘আমার টুপিগুলো তোমার সঙ্গে বদল করবে? তোমার শাড়ির চেয়ে আমার টুপিগুলো অনেক দামি।’
বুড়ো দাদু সরল মনে টুপির বদলে কাপড়টা দিয়ে দিলো। দাদু যখন বাড়ি ফিরছিল তখন মাঝপথে শুরু হলো ঝড়, সেইসঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। বৈশাখ মাসের শুরুতে এরকম বৃষ্টি হয়। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দাদু দেখলেন কারা যেন ভিজছে।
এগিয়ে এসে দাদু দেখেন কার্তিক দেবতার মতো কেউ দাঁড়িয়ে আছে, তার সঙ্গে আরো কয়েকজন সঙ্গী-সাথীও আছে। বয়সে কম বলে কার্তিকের প্রতি দাদুর খুব মায়া লাগলো। যাতে তারা না ভিজে তাই তিনি টুপিগুলো তাদের মাথায় পরিয়ে দিলেন। তারপর বাড়ির পথ ধরলেন।
বাড়িতে এসে দাদু দিদিমাকে সব খুলে বললেন। দিদি বললেন, ‘খুব ভালো হয়েছে এই বৃষ্টির মধ্যে ওরা থাকত কীভাবে?’ রাত বাড়ছে। বৃষ্টি বাড়ছে। হালকা ঠাণ্ডাও পড়ছে। দাদু আর দিদিমার ছোট ঘরটা প্রায় ডুবে গেলো পানিতে। এই ঠাণ্ডা-রাতে একটা মিহি গলার সুর এসে কানে বাজছে তাদের। বেশ ভলোই লাগছে দুজনের। কেউ হয়তো নববর্ষের বাজার করে হাট থেকে ফিরছে।
কিন্তু না। একটু পর দেখা গেলো গানের সুরটা তাদের ঘরের দিকে আসছে। এইতো একেবারে ঘরেই ঢুকে গেলো যেন। দাদু আর দিদিমা দরজা খুললেন। দরজা খুলে তারা দেখলেন ঘরের বাইরে একটা বস্তা পড়ে আছে। দিদিমা আস্তে করে বস্তাটা খুললেন। সেকি! টাকা, নতুন শাড়ি, পাঞ্জাবি, চাল, সবজি, মাছ, মাংস! এগুলো কোত্থেকে এলো? দাদু আর দিদিমা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখেন টুপি পরা পাঁচজন বৃষ্টিতে হাঁটছে। দিদিমা না চিনতে পারলেও দাদু তাদের চিনতে ভুল করলেন না।
তিনি দিদিমাকে বললেন, ‘হ্যাঁ গো, এরাই তো কার্তিকের বন্ধু। বৃষ্টিতে ভিজছে বলে যাদের আমি টুপি দিয়েছিলাম। ওই যে, কার্তিকও আছে তাদের সঙ্গে।’ ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে আসছে।
কার্তিক আর তার সঙ্গীদের গানের সুর মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে। পুবের আকাশে দেখা দিচ্ছে ঊষার রঙিন আলো।
(চীনের রূপকথা অবলম্বনে)
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228