ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জেলখানায় লেখা বই

সাইফ উদ দৌলা
🕐 ১১:১০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৯

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গ্যালেলিও বলেছিলেন, পৃথিবী কিন্তু এখনো সূর্যের চারপাশেই ঘোরে! পৃথিবীর ইতিহাসে মতাদর্শিক কারণে জেল খাটা এমন অনেক রাজনীতিবিদ ও কবি-সাহিত্যিক রয়েছেন যারা জেলখানায় বসে লিখেছেন বই। সেসব আজ তোমাদের জন্য।

১৫৯৭ সালের কথা। স্পেনের নৌবহরে সবে কোয়ার্টার-মাস্টারের কাজ পেয়েছে এক যুবক। গ্রামের ছেলে সে। অভিজ্ঞতাও নেই তেমন। তাই কয়েক মাসের মধ্যেই হিসাবপত্তরে গোলমাল করে ফেলল। ওই গোলমালের জন্য রাজসভায় ডাক পড়ল তার। রাজা বেজায় কড়া। কাজে গাফিলতির জন্য রাজপ্রাসাদের চত্বরে যে কুখ্যাত সিভিল কারাগার আছে সেখানে পাঠিয়ে দিলেন ওই যুবককে, তিন মাস মেয়াদের কারাদণ্ড। কাটাতে হবে নির্জন সেলে। একা একা সময় আর কাটতেই চায় না, তাই দোয়াত আর পালকের কলম নিয়ে একটা মজার গল্প লিখতে বসল ওই বন্দি যুবক।

তার ওই গল্পের নায়ক মাঝবয়সী আধপাগলা এক ভালো মানুষ। ভাড়া ঘরে বসে সে নানা অ্যাডভেঞ্চারের স্বপ্ন দেখে; আর স্বপ্ন দেখতে দেখতে নিজেকেই একদিন মহাবীর ভেবে মরচে-ধরা বর্ম পরে, পুরনো আমলের ঢাল তলোয়ার হাতে বুড়ো ঘোড়ার পিঠে চেপে বেরিয়ে পড়ল অজানা অভিযানে! সে ভারী মজার গল্প।

এতটা শোনার পর নিশ্চয়ই তোমাদের বন্দি যুবকের নামটাও শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। নাম তার মিগুয়েল ডে সার্ভেন্তেস। আর জেলখানায় বসে লেখা তার বইটি এখন জগদ্বিখ্যাত ‘ডন কিহোতে’। ছেলে-বুড়োর সবারই প্রিয় বই কয়েকশ বছর ধরে। অথচ তেমন একটি বই লেখা শুরু হয়েছিল কি না জেলখানায়!

নেলসন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের অবিসংবাদিত নেতা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে কাটিয়েছেন কারাগারে, মোট কারাবাস করেছেন ২৭ বছর। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য শান্তিতে নোবেল পান ১৯৯৩ সালে। তার আত্মজীবনীর নাম ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’ যা কি না জেলে বসে লেখা।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর ‘গ্রিমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি’ বইটিও ১০ বছর জেলে থাকার সময়ে লেখা। তার অনেক লেখাই জেলখানায় বসে লেখা হয়েছে। তার লেখা ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ ও ‘মেয়ের কাছে বাবার চিঠি’ বই দুটিও জেলে বসে লেখা। এক পাঠক একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ইদানীং লিখছেন না কেন?’ নেহরু উত্তর দিলেন, ‘ইদানীং তো আর জেলবাস হচ্ছে না তেমন’।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তার মেয়ে শেখ হাসিনা খুঁজে পান। খাতাগুলো ছিল খুব পুরনো, পাতাগুলো জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। সেই খাতা শেখ মুজিব ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় এ আত্মজীবনীমূলক লেখাকে গ্রন্থে রূপান্তরিত করা হয়, এই বইটিই হলো, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’।
বঙ্গবন্ধুর লেখা একটি ডায়েরির গ্রন্থরূপ হলো ‘কারাগারের রোজনামচা’। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ কালপর্বের কারাস্মৃতি এ গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কারাগারে তার লেখা দুটি ডায়েরি জব্দ করে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ও পুলিশের বিশেষ শাখার সহায়তায় উদ্ধারকৃত একটি ডায়েরির গ্রন্থরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়, এ বইটিই হলো ‘কারাগারের রোজনামচা’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বন্দি হন। ওই সময়টা ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। জেলে বসে শেখ হাসিনা লেখেন, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ নামে চমকপ্রদ এক প্রবন্ধ, এ বইটিই হলো ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’। জেলখানায় লেখা আরও কিছু বিখ্যাত বই হলো- নাজিম হিকমতের ‘জেলখানার চিঠি’, অ্যান্তোনিও গ্রামসির ‘প্রিজন নোটস’, থমাস পাইনের ‘দ্য এজ অব রিজন’, হুগো গ্রোশিয়াসের ‘অন দ্য ল অব ওয়ার অ্যান্ড পিস’, বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘ইন্ট্রেডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল ফিলোসফি’, অ্যাডলফ হিটলারের আত্মজীবনী ‘মেইন ক্যাম্ফ’, ডানিয়েল ডিফোর ‘হিম টু পিলোনি’, মার্কো পোলোর ‘চীন ভ্রমণের কথা’ এবং ও হেনরির লেখা বহু বিখ্যাত ছোটগল্প। ফ্রানকোইস মারিয়া অ্যারোয়েৎ ওরফে ভলতেয়ারও ১৭৫৭ সালের মে মাসে ফ্রান্সের কুখ্যাত বাস্তিল কারাগারে বন্দি থাকার সময় তার বিখ্যাত মহাকাব্য ‘হেনরিয়াদ’ লেখা শুরু করেন। জন বানিয়ন জেলে বসে ১৬৭০ সালে লেখেন অমর গ্রন্থ ‘দ্য পিলগ্রিম প্রগ্রেস’।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper