আঁচলের বেলী ফুল গাছ
আবুল কালাম আজাদ
🕐 ৪:২৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
আঁচল চোখ খুললো। দেখে ঘর ভরে আছে আলোয়। শীতের সকাল বেলার উজ্জ্বল-নরম আলো। আঁচল তাকাল জানালায়। বাইরে কি উজ্জ্বলতা! কয়টা বাজে? মা তাকে ডাকেনি কেন? আঁচল বিছানা ছেড়ে নামল। গিয়ে দাঁড়াল বারান্দায়। বারান্দায় আলোর খেলা। ফুরফুরে হাওয়া আসছে। কি যে ভালো লাগা!
একটা বেলী ফুলের গাছ। বারান্দার একপাশে টবে। আঁচল তাকায় সেদিকে। তাকিয়ে চমকে উঠে। কী হয়েছে ওর! পাতাগুলো কেমন হলদেটে। কিছু পাতা ঝরে গেছে। শুকনো ডাল বের হয়ে আছে। নিচের মাটি কেমন খটখটে। কেমন ফুটিফাটা।
আঁচল বুদ্ধিমতী মেয়ে। সহজেই সবকিছু বুঝতে পারে। বুঝতে পারল, গাছটার কী হয়েছে। পরীক্ষার ঝামেলায় ও মহাব্যস্ত ছিল। গাছটার এতটুকু যত্ন নিতে পারেনি। সে কারণেই ওর এখন এ অবস্থা। আঁচল মগ ভরে পানি নিয়ে এল। ঢাললো গাছের গোড়ায়। তারপর থেকে আঁচল নিয়মিত বেলী ফুল গাছটার যত্ন নেয়। পানি দেয়। গোড়ার মাটি আলগা করে দেয়। বাবাকে দিয়ে সার কিনে এনে গোড়ায় দেয়। শত ব্যস্ততায়ও ওকে ভুলে না।
কেটে যায় আরও কিছু দিন। গাছটা কেমন সবুজ হয়ে উঠল। নতুন পাতা গজিয়ে ঝাকড়া হয়ে গেল। চারদিকে ছড়িয়ে গেল ডালপালা।
এক ছুটির দিন ভোরে। বাবা বারান্দায় গিয়ে অবাক। ডাকতে লাগল-আঁচল-আনন, তোমরা কোথায়? জলদি বারান্দায় এসো। দেখে যাও কাণ্ড!’
আনন আঁচলের ছোট বোন। এতটুকুন। এখনো স্কুলে যায় না। পড়তে পারে না। পড়বে কী করে? সব শব্দ কি বলতে পারে? ফুলকে বলে তুল। আঁচলকে ডাকে আঁতল। কলমকে বলে তলম। তরকারিকে বলে তলকালি। আবার কিছু শব্দ সে নিজেই বানায়। যেমন পানিকে বলে মাম। স্যান্ডেলকে বলে ন্যান্ডেল। শুনে আঁচলের খুব হাসি পায়। আনন কিন্তু দুষ্টুমিতে ওস্তাদ। বাবার জুতো পায়ে দিয়ে খটখট করে হাঁটে। আর ধপ ধপ করে আছাড় খায়।
আঁচল আর আনন ছুটে গেল বারান্দায়। সঙ্গে ওদের মা-ও। আঁচল বলল ‘কি হয়েছে?’ মা বলল-‘কী হয়েছে?’ আননও বলল- ‘কী হয়েতে?’
বাবা আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। ওরা তো অবাক। ভীষণ অবাক। বেলী ফুল গাছটা ছেয়ে আছে সাদা ফুলে। কি সুন্দর দেখতে! কি মিষ্টি গন্ধ! কয়েকটা মৌমাছি চলে এসেছে মধু নিতে। বাবা বলল-‘কেমন করে হলো?’ আঁচল বলল, ‘ভালোবাসা বাবা। ভালোবাসা পেয়ে ও উপহার দিয়ে দিয়েছে।’ বাবা তাকিয়ে আঁচলের মুখে। আনন হাত তালি বলতে লাগল- ‘ভালোবাতা! ভালোবাতা!’
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228