রাজা পেল সাজা
কুমার দীপ
🕐 ১:৩৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০২১
ছেলেটির নাম রাজা। দেখতে রাজাদের মতোই। মাঝে-মধ্যে মাথায় পুরনো যুগের রাজাদের টুপি পরে। রাজার মতো সাজগোজ করে। কিন্তু তার কাজকর্ম ঠিক রাজার মতো না। যেমন দুষ্টু, তেমনি অবাধ্য। রাজার খুব ছোট্ট একটি বোন আছে। ওর নাম মণি। মণির সঙ্গে রাজা মাঝে-মধ্যে খেলাধুলা করে। কিন্তু যতটা খেলা করে, তার চেয়ে বেশি ঝগড়া করে। বোনটাকে সে মারে। বোনের কান্না শুনে মা রাজাকে বকা দেন। বলেন- রাজা, তুই বই পড়।
রাজা বই নিয়ে বসে, কিন্তু পড়ে না। বসে বসে বইয়ের পাতা ছেঁড়ে। কাগজে হিজিবিজি আঁকে। বিকেল হলে রাজা রাজা মাঠে যায়। মাঠে গিয়ে খেলার চেয়ে বেশি গোলমাল করে। ওকে কেউ খেলায় নিতে চায় না। সকালে মা ওকে স্কুলে পাঠায়। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার পথে রাজা এখানে-সেখানে দেরি করে। আশপাশের লোকেরা কী করছে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। সব দিন স্কুলে যায় না। যেদিন যায়, দেরি করে যায়। শিক্ষক তাকে মন্দ বলেন। ক্লাসে শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে না। সহপাঠীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে। এর-ওর কলম ছুড়ে ফেলে, খাতার সাদা পাতা দাগিয়ে দেয়। মারামারিও করে প্রায়ই। তার যন্ত্রণায় সকলে অতিষ্ঠ।
রাজা সবচেয়ে যা ভালো পারে, তা হলো গাছে ওঠা। যেকোনো গাছেই উঠতে পারে সে। গাছে উঠে ফল পেড়ে খায়। ফেলেও দেয়। কিন্তু রাজার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো গাছে উঠে পাখির বাসা খোঁজ করা, বাসা থেকে ডিম ও বাচ্চা চুরি করা। ডিমগুলো প্রায়ই ভেঙে ফেলে, বাচ্চা পেলে বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু তার জ্বালায় কোনো বাচ্চাই কয়েকদিনের বেশি বাঁচে না। গ্রামের মানুষ তাকে গালাগালি করে, মাঝে-মধ্যে তাড়া দেয়। রাজার বাবা কাজের জন্য প্রায়ই বাড়িতে থাকতে পারে না। মা তাকে বারবার নিষেধ করে, তবু সে এসব করে।
স্কুলে যাওয়া-আসার পথে একটি বটগাছ। সেই গাছের ডালে একটি ভাত শালিকের বাসা। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে রাজা উঠল সেই গাছে। ডালটি বেশ উপরেই ছিল। কোনো শব্দ না-করে খুব আস্তে আস্তে বাসার কাছে গেল সে। তারপর বাচ্চাগুলো তুলে নেওয়ার জন্যে বাসায় হাত বাড়াল। অমনি ফোঁস করে ফণা তুলল বিষধর এক সাপ। মুহূর্তেই নিচে পড়ে গেল রাজা।
রাস্তার লোকজন ছুটে এসে রাজাকে হাসাপাতালে নিয়ে গেল। তার মা খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গেল সেখানে। ডাক্তারকে বলল- স্যার, আমার রাজার কী হয়েছে?
ডাক্তার বললেন- গাছ থেকে পড়ে গিয়ে রাজা মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছে। ওর ডান হাতটা ভেঙে গেছে। কিন্তু পড়ে না গেলে সাপের ছোবলে হয়তো মারা যেত।
মা রাজার মাথার কাছে বসল। রাজা বলে- মা, তুমি কেঁদো না। আমি আমার দুষ্টুমির সাজা পেয়েছি। আর কোনোদিন ওভাবে পাখির বাসা ভাঙতে যাব না।
মা হাসিমুখে রাজাকে আদর করল।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228