ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

৭ বছরে ৬৬ বার অপারেশন

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১২:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২১

৭ বছরে ৬৬ বার অপারেশন

বয়স তখন ১২ বছর। হঠাৎ করে শরীরের কোনো কোনো অংশ ফুলে যেতে শুরু করে। এই ফোলা ভাব থাকে মাসের পর মাস। এখন বয়স ১৯। এই সাত বছরের মধ্যে তার ফুলে যাওয়া অংশের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার ৬৬ বার অপারেশন হয়েছে। এর মধ্যে একবার এমন অবস্থা হয়েছিল যেখানে তার একটি পা কেটে ফেলার উপক্রম হয়েছিল। এই তরুণীর নাম শার্লট এভান্স। ছোটকালে এই তরুণীর কোনো সমস্যাই ছিল না। নাচতে ভালোবাসতেন। প্রায় প্রতিদিনই নাচতেন। থিয়েটারেও নাচের অনুষ্ঠান করতেন। তারপর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এক দিন নিতম্বে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। নিতম্বে ভেতরের এক জায়গায় বিচির মতো কিছু একটা অনুভব করেন এভান্স। ব্যথা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক পর্যায়ে টের পান তার সব আঙুল ঠান্ডা হয়ে আসছে। চিকিৎসকরা এটা দেখে বলেন, তার কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম হয়েছে। সাধারণত শরীরে ব্যথা পেলে এটা হয়। কিন্তু এভান্সের কেন এটা হচ্ছে সে ব্যাপারে তারা কোনো কারণ দেখাতে পারেননি।

হাত এবং পায়ের মাংসপেশিগুলো বিশেষ এক জায়গায় ফ্যাসিয়া নামের এক ধরনের কোষ দিয়ে আটকানো থাকে। এই জায়গাগুলোকে বলে কম্পার্টমেন্ট। কোনো কারণে এই কম্পার্টমেন্টের ওপর চাপ বেড়ে গেলে অ্যাকিউট কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম দেখা দেয়। হাসপাতালে ফ্যাসিওটমির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়। মূলত জায়গাটিতে কেটে ফুটো করে চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা হয়।

শার্লট এভান্স বলেন, এই পর্যায়ে আমার শরীরে প্রথমবার অপারেশন করা হয়। তারা আমার মাংসপেশিতে কেটে ফুটো করে। এবং কয়েক দিন ধরে সেই ফুটো খুলে রাখা হয়। এরপর চাপ কমে গেল সেই কাটা জায়গা জুড়ে দেওয়া হয়। ওই অপারেশনের পর থেকে আমার সমস্যাও বাড়তে থাকে। একবার আমাকে একটানা সাত মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। এ সময় আমার মা অসাধ্য সাধন করেছেন। তিনি টানা সাত মাস হাসপাতালের চেয়ারে রাতে ঘুমিয়েছেন। হাসপাতালের শিশু বিভাগে যে সময়টুকু ছিলাম তখন মনে হতো ডাক্তাররা আমার জন্যে তেমন কিছু একটা করছেন না। এরপর তারা আমাকে বলতে থাকলেন, আমার আসলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তখনও আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা বার বার করে ফুলে উঠছিল।

তবে কাটা শরীর নিয়ে শারীরিক যন্ত্রণাতো রয়েছেই, নানা কটু কথাও শুনতে হয় তাকে। এজন্য একবার আত্মহত্যার চেষ্টায়ও করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে শার্লট এভান্স বলেন, প্রতিবার অপারেশনের পর আমার শরীরে কাটা দাগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। লোক মনে করে আমার মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে আমি নিজেই নিজের দেহ কেটে ফেলি। কিছুদিন আগে হাসপাতালের লিফটে এক লোক আমাকে বলে আমি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছি।

করোনাভাইরাসে যখন লোকে মারা যাচ্ছে তখন আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করছি। চলতি বছর মোট আটবার শরীরের কোনো না কোনো অংশ ফুলে গেছে এভান্সের। একই সঙ্গে অন্যান্য সমস্যাও বাড়ছে। বয়স কম থাকলে ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেত, এখন সময় বেশি লাগে।

এখন শারীরিক সমস্যা শুরু হলে বাসাতেই থাকেন এভান্স। পরিস্থিতি খুব খারাপ না হলে বা অপারেশন করার প্রয়োজন না হলে হাসপাতালে যান না। বাসায় নড়াচড়া করার ব্যাপারে মা তাকে সাহায্য করেন।

 
Electronic Paper