ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভাড়া হবে ঝুলন্ত বাড়ি

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১২:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২১

ভাড়া হবে ঝুলন্ত বাড়ি

বাইরের প্রকৃতির ছোঁয়া না পেলে কাহাতক ভালো লাগে? ভাবুন তো! এমন অবস্থায় যদি আপনার বসবাসের ছোট্ট ঘরটা গাছের ওই আগার ওপর হতো? ওখান থেকে যতদূর দুচোখ যায়, যেমন খুশি দেখাও যেত। আবার নিঃশ্বাসের অক্সিজেনের আকালের এই করোনাকালে বোনাস হিসেবে পাওয়া যেত অক্সিজেন। নিঃসর্গের চনমনে নিঃশ্বাসে ভরে উঠতো ফুসফুস? আর যদি ঘরটায় আপনি খেলতে পারতেন, যেমন খুশি, যখন যা খুশি করতে পারতেন। অন্যদের উৎপাত থেকে বাঁচতে পারতেন। তাহলে সত্যি দারুণ মজার হতো!

ঝুলন্ত বাড়ি এখন আর পরীর রাজ্যের গল্প কিংবা স্বপ্নের কোনো কল্পনা নয়। গাছের ওপর শুয়ে-বসে, ঘুমিয়ে উঠে পাহাড়-সাগর, বন-জঙ্গল, প্রাণী দেখার অপরূপ ব্যবস্থা এখন অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ অনেক দেশেই দেখা যায়। গাছের ঝুলন্ত বাড়িতে থেকে উপভোগ করা যায় সবুজ মাঠ-প্রান্তর, মুক্ত আকাশ, দিগন্তজুড়ে পাখিদের উড়ে চলা! বৃষ্টি-বর্ষাকে উপভোগ করার বিলাসবহুল হোটেল-রেস্তোরাঁয় যা যা থাকে, এখন সবই রয়েছে ঝুলন্ত গাছবাড়িতে। রয়েছে সোলার বিদ্যুৎ, আধুনিক ডিজিটাল দুনিয়ার ওয়াইফাই, স্মার্টটিভির আনন্দ-বিনোদনের সব সুবিধার বন্দোবস্ত। অবকাশ বিনোদনে, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সান্নিধ্যে থাকার উপায় এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে? সাধারণ পথের ধারে আবাসিক হোটেলে না থেকে দুনিয়ায় এখন জঙ্গলের গাছের ওপর ঝুলন্ত বাড়িতে রাতযাপন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ধরনের বাড়ি তৈরির জন্য ৬০০ একর অরণ্য ভূমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া মাউন্ট প্রাইভেট নামের এক কোম্পানি।

ইন্দোনেশিয়ায় নারকেল বাগানে নারকেল গাছের ওপর রয়েছে এমন ঝুলন্ত গাছবাড়ি। এসব বাড়িতে থাকাও যায় আবার অতিথিরা ইচ্ছে করলে তাজা ডাব, নারকেল পেড়ে খেতে পারেন। ঝুলন্ত বাড়িতে অতিথি হয়ে যারা থাকেন। তারা সত্যিই ভাগ্যবান। আজকাল শুধু অবকাশ যাপন বা হানিমুন যাপনের জন্য ঝুলন্ত বাড়ি তৈরি হয় তা কিন্তু নয়। গাছের ওপর ঝুলন্ত বাড়ির ধারণা এতটাই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, আজীবনের বসবাসের জন্যও তৈরি করা হচ্ছে গাছের ডগায় ঝুলন্ত বাড়ি।

ঝুলন্ত বাড়ি কেন?

পৃথিবীতে বাড়ছে মানুষ। প্রকট হচ্ছে আবাসন সমস্যা। উন্নত দেশগুলোয় আবাসন সমস্যা আরও মারাত্মক। শহর, বন্দর, গ্রাম সব এক সমান। সবখানেই ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। মুক্তভাবে প্রাণভরে নিঃশ্বাস গ্রহণের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ কোথাও নেই। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের স্পর্শ পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার। সবখানেই নগর জীবন। এই নগর জীবনে হাঁপিয়ে উঠেও একটু জিরিয়ে নেওয়ার স্থান নেই। এজন্য ঝুলন্ত গাছবাড়ি নির্মাণে উৎসাহ দিতে ইংল্যান্ডে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডে আবাসন সমস্যা নিরসন কল্পে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গাছ না কেটে, গাছ অবিকল রেখে, গাছের ওপর কাঠের ঝুলন্ত ঘর-বাড়ি বানানো সরকারিভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই আপনার বাড়ির উঠোনেও যদি বড় কোন গাছ থাকে, তার ওপর আপনি ঝুলন্ত বাড়ি বানাতে পারেন। কেউ আপনাকে পাগল ভাবলে ভাবুক। সেটি মুখ্য বিষয় নয়। নিজের বাড়িতে একটা ঝুলন্ত গাছবাড়ি থাকলে সবচেয়ে ভালো। এজন্য আপনার অর্থ ও বুদ্ধি যা খরচ হবে, তা বৃথা যাবে না। তবে ঝুলন্ত গাছবাড়ি বানাতে গাছটি পুরনো হতে হয় এবং সুন্দর দৃশ্যের নিঃসর্গ রয়েছে কি-না, তা আগেভাগে দেখে নেওয়া দরকার।

ঝুলন্ত বাড়ি কীভাবে বানানো হয় : আবাসন সমস্যার পড়িমরি অবস্থায় বিকল্প আবাসন তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন লন্ডনের ওয়েমাউথের টম ব্যারন। গাছ-গাছালির ওপর বাবুই পাখির মতো ঝুলন্ত বাসা বানিয়েছেন। গাছের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় কাঠের তক্তা, বাঁকানো স্টিলের পাত দিয়ে মজবুত করে বেঁধে দ্বিতল বাড়িতে তৈরি করে নিয়েছেন বাথরুম, কিচেনসহ সব। ভবনের মেঝেও শক্ত। সেজন্য মোটা শক্ত কাঠের তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে। রয়েছে ঠেস দিয়ে বসার ব্যবস্থা। রয়েছে পরিবেশ উপযোগী আচ্ছাদন। ভেতরে মনোমুগ্ধকর ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা। ভেতরে হাঁটা-চলার জন্যও রয়েছে প্রচুর ফাঁকা প্যাসেজ। উপর তলায় বেডরুম। নিচতলায় রয়েছে ডাইনিং, কিচেন রুম। প্রতিটি কক্ষের আয়তন দশ বাই আট ফুট। বেডরুমে বিছানা রাখা হয়েছে মাঝ বরাবর। ক্যাপসুলের মতো দেখতে বেডরুমের কেবিন খুবই রোমান্টিক করে সাজানো হয়েছে। বেডরুমের সঙ্গে বিশাল কাঁচের জানালা রয়েছে। এতে প্রকৃতি উপভোগের আনন্দ মেলে। দ্বি-কক্ষের বাড়ির ভেতরটা এমন করে বানানো যে, আপনি আসল বাড়িতে যেভাবে বসবাস করেন। সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে সবকিছু।

 
Electronic Paper