রহস্যময় মাছ
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
একটি ছয় ইঞ্চি লম্বা, ভুতুড়ে সাদা এবং চোখবিহীন মাছ। পৃথিবীর গভীরতম নদীর মাছ এটি। কঙ্গো নদীর উপকূলে বসবাসরত বুলু সম্প্রদায়ের জেলেরাই ২০০৭ সালে প্রথম এই মাছের সন্ধান পায়।
তাদের কাছে মাছটি মন্ডেলি ব্যুরো নামে পরিচিত। এর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো পানিতে থাকা অবস্থায়ই তারা মৃত্যুবরণ করে। তবে কেন এ রহস্য?
কঙ্গোর গভীরতম নদী : মারিয়েন এনগাউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মৎস্যবিদ ভিক্টর মামোনেকেনের মতে, স্থানীয়ভাবে মন্ডেলি ব্যুরো নামে পরিচিত এই মাছটি। দীর্ঘদিন ধরে বুলু গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত। তাদের কাছ থেকেই ড. মেলানি স্টিয়াসনি সর্বপ্রথম এই মাছটি সংগ্রহ করেছিলেন। এই মাছটি তেলাপিয়া ও ব্লুগিল গোত্রের অন্তর্ভুক্ত করে। তবে সে তার গোত্রের চেয়ে ভিন্ন- খুব ছোট, চোখহীন এবং কেভ ফিশের মতো ফ্যাকাশে। কঙ্গো নদীটি আফ্রিকার নিরক্ষীয় অববাহিকা পেরিয়ে আড়াই হাজার মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই নদীটি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহমান। কঙ্গোর নদীতে অন্তত ৩০০ প্রজাতির মাছের সন্ধান মিলেছে। তাদের মধ্যে এই মাছটিই অন্যতম, যার বৈশিষ্ট্য অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতটাই গভীর পানির মাছ এটি যে উপরে উঠতে গিয়ে সে মরতে বসেছে। এবার নদীর গভীরতা মাপার সময় এলো।
মাছের বৈশিষ্ট্য : ড. মেলানির এই কঙ্গো প্রজেক্টের সঙ্গে রিপাবলিক অব কঙ্গোর মারিয়েন এনগাউবি বিশ্ববিদ্যালয়, ডিএনসির কিনশাসা বিশ্ববিদ্যালয়, এবং এএমএনএইচ-এর সঙ্গে যৌথভাবে এই গবেষণা কাজটি করেন। তারা ২০০৮ ও ২০০৯ সাল নাগাদ নদী গর্ভের অনন্য মাছ এবং এর গভীরতা ও পারিপাশির্^ক অবস্থা নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন। তারা কম পানির মৌসুমে নদীর গভীরতা পরীক্ষা শুরু করেন। তবে অত্যাধিক স্রোত থাকায় তারা সেখানে নৌকা নিয়ে যেতেও ব্যর্থ হন। কারণ নদীর গভীরতম স্থানটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। অতঃপর তারা নদীর গভীরতা মাপার কাজে অ্যাকোস্টিক কারেন্ট প্রোফাইলার ব্যবহার করেন। তাদের তথ্যমতে, সত্যিই নদীটি অনেক গভীর। অন্তত সাড়ে ৭৫০ ফিট নিচে তারা মাটি খুঁজে পান। তাদের এই গবেষণাটি ২০০৯ সালে ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভেতে প্রকাশ পায়।
গভীরতম নদীর মাছ : মূলত নদীর গভীরতম অঞ্চলের প্রতিকূল পরিবেশ মাছের প্রজননকে পানির সর্বনিম্ন গহ্বরে পাঠাতে বাধ্য করে। গবেষক দলটির অনুমান যে, মন্ডেলি ব্যুরো নামক মাছটি গভীর জলের গিরিখাতগুলোতে বাস করে। মাঝে মাঝে পাথরের দেওয়ালের সঙ্গে স্রোতের জোরালো ধাক্কায় তারা উপরে উঠে আসে। পৃষ্ঠ থেকে প্রায় শত ফুট উপরে উঠে আসতেই তাদের রক্ত থেকে নাইট্রোজেনের বুদবুদ বেড়িয়ে আসে। তারা অন্তত ১০০ ফিট উপরে উঠতে গিয়েই বেন্ডের কারণে মারা যায়।