ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজমিস্ত্রি থেকে সেরা চিকিৎসক

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১২:০৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২১

রাজমিস্ত্রি থেকে সেরা চিকিৎসক

কেপটাউন মেডিকেল ইউনিভার্সিটি চিকিৎসা জগৎ এবং ডাক্তারি পড়ার জন্য বিশ্ব বিখ্যাত এক প্রতিষ্ঠান। এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন একজন ব্যক্তিকে মাস্টার অফ মেডিসিন সম্মান জানিয়েছে, যিনি জীবনে কখনো স্কুলেই যাননি। জানতেন না লেখাপড়া। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের বাসিন্দা, বিখ্যাত সার্জন ডা. হ্যামিল্টন নকি। যাকে ‘মাস্টার অফ মেডিসিন’ সম্মানে সম্মানিত করা হয়।

ভাবতেই অবাক হচ্ছেন অনেকে। তবে এটি সত্যি যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে খ্যাতির চূড়ায় এই চিকিৎসক। যার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই নেই। ১৯৩০ সালে পূর্ব কেপের ছোট্ট গ্রাম সোনিট্যানি ভিলেজ জন্ম হ্যামিল্টনের। জন্ম থেকেই অভাব তার সঙ্গী। পিতা অসুস্থ হয়ে পড়লে, হ্যামিল্টন কাজের খোঁজে কেপটাউন সিটি চলে যান। শহরে গিয়ে তিনি রাজমিস্ত্রির জোগালে হিসেবে কাজ শুরু করেন। কেপটাউন মেডিকেলে তখন চলছে নির্মাণ কাজ। বেশ কয়েক বছর তিনি সেখানে কাজ করেন। হ্যামিল্টনের কাজের মানসিকতা এবং কর্মের প্রতি নিষ্ঠা দেখে, তাকে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ সেখানেই রেখে দেয়।

একদিন প্রফেসর রবার্ট ডায়াস একটি জিরাফ নিয়ে গবেষণা করছেন। নিয়মমাফিক জিরাফকে অজ্ঞান করে অপারেশন চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে জিরাফ ঘাড় নাড়তে শুরু করে দিল। এমতবস্থায় জিরাফের ঘাড়টা শক্ত করে ধরে রাখার জন্য হ্যামিল্টনকে জিরাফের গর্দান ধরে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হলো। অপারেশন কন্টিনিউ আট ঘণ্টা চলতে থাকে। এর মধ্যে ডাক্তার-টিম ব্রেক নিতে থাকেন। কিন্তু হ্যামিল্টন টানা আট ঘণ্টা ধরে থাকলেন জিরাফের গলা। প্রফেসর রবার্ট ডায়াস তার দৃঢ়তা এবং কর্মনিষ্ঠা দেখে আপ্লুত হয়ে গেলেন। তিনি হ্যামিল্টনকে ‘ল্যাব এসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে পদোন্নতি পাইয়ে দেন। এর পরই ঘুরে যায় তার জীবনের মোড়।

১৯৭০ সালের কথা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা শুরু হয়। তিনি লিভারের মধ্যে অবস্থিত এমন একটি ধমনী চিহ্নিত করেন, যার কারণে লিভার প্রতিস্থাপন অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও অবাক হয়ে যান। আজ তার দেখানো পথ ধরেই, লিভার ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে। নিরক্ষর হ্যামিল্টন জীবনের পঞ্চাশ বছর কাটিয়ে দেন কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই পঞ্চাশ বছরে তিনি একদিন ও ছুটি নেননি। প্রতিদিন ১৪ মাইল পায়ে হেঁটে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন। তিনি মোট ত্রিশ হাজার সার্জনের শিক্ষা-গুরু ছিলেন।

২০০৫ সালে এই কিংবদন্তি মানুষটি মারা যান। তার মৃতদেহ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের মধ্যেই দাফন করা হয়। এই বিরলতম সম্মান একমাত্র তিনিই অর্জন করতে পেরেছেন। কিংবদন্তি সার্জন ডা. হ্যামিল্টন প্রমাণ করে গেছেন, কেবল পুঁথিগত শিক্ষাটুকুই যথেষ্ট নয়।

 
Electronic Paper