ঢাকায় প্রথম বিজলি
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২০
ঢাকা পূর্ববঙ্গের প্রধান শহর হলেও কলকাতার সঙ্গে দৃশ্যমান পার্থক্য অনেক। কলকাতার রাস্তায় দেখা যায় সেই ১৮৫৭ সাল থেকেই গ্যাস বাতির ব্যবহার। আর এদিকে রাত নামলে পূর্ববঙ্গের বিস্তৃত জনপদে নেমে আসে অন্ধকার। ঢাকা শহর আর গ্রামের মধ্যে তখন আর আলাদা করে চেনার উপায় থাকে না। শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কেরোসিন বাতির ব্যবস্থা করা হতো। এই বাতিগুলো হালকা বাতাস কিংবা বৃষ্টি আসলে বন্ধ হয়ে যেত। আর সে সময় এখানে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
যদিও তখনকার সময় ধনী ব্যক্তিদের ঘরে ঝাড়বাতির চল আছে। বাদ বাকি সবাই চলে হারিকেন, কুপি বাতি আর মোমের আলোয়। ১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ সরকার নবাব আবদুল গণিকে নাইট কমান্ডার অব দ্য স্টার অব ইন্ডিয়া (কেসিএসআই) উপাধিতে সম্মানিত করে।
পুত্র নবাব আহসানউল্লাহ বাবার এই প্রাপ্তিকে স্মরণীয় রাখার জন্য ঢাকার রাস্তায় গ্যাস বাতির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। নবাবের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সড়কে তেলের বাতির পরিবর্তে গ্যাস বাতির উদ্যোগ নেীয়া হয়। তবে নানা কারণে বিলম্বিত হতে থাকে গ্যাস বাতি স্থাপনের কাজ। এরই মধ্যে কেটে যায় ১২ বছরেরও বেশি সময়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে আগমন ঘটে এক নতুন শতাব্দীর। ঢাকার রাস্তায় তবু গ্যাস বাতির দেখা মেলে না। নবাব আহসানউল্লাহ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কথা রাখতে পারলেন। এবার আর শুধু গ্যাস বাতি নয়, তিনি ঢাকাবাসীকে চমকে দিলেন সরাসরি বিজলি বাতি ব্যবস্থা করে।
তার মৃত্যুর মাত্র নয়দিন পূর্বে স্বপ্ন পূর্ণ হলো, রাখলেন নগরবাসীকে দেওয়া দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি। প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হলো। ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে জ্বলে উঠলো বিজলি বাতি আলোয়। আলো জ্বলল হলো নবাবের প্রিয় আহসান মঞ্জিলেও।
১৮৬৯ সালে ঢাকায় বাতি ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু হয়। মিউনিসিপ্যালিটির সভাপতি ও ম্যাজিস্ট্রেট জর্জ গ্রাহামের নির্দেশ অনুযায়ী, সিভিল সার্জন ড. হেনরি কাটক্লিফ ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ও উন্নয়ন বিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। আর এই রিপোর্টেই তিনি তুলে ধরেন ঢাকার রাস্তায় সড়ক বাতি স্থাপনের কথা ।
তবে গ্যাস বাতির বদলে কাটক্লিফ কেরোসিন বাতি জ্বালানোর প্রস্তাব রাখেন। রিপোর্ট দেখে নবাব খাজা আবদুল গণি বলছিলেন, এই রিপোর্ট বাস্তবায়িত হলে ঢাকা স্বর্গে পরিণত হবে। তবে ঢাকার মানুষের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল নয়। আর তাই নগর উন্নয়নে আর্থিক অনুদান দেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।