উল্কাপিণ্ডেরও সুগার আছে
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০১৯
মহাকাশে এই প্রথম চিনির (সুগার) হদিশ মিলল। যে চিনি আমরা রোজ খাই, সেই চিনি অবশ্য নয়, তারই তুতো ভাই। গোত্রে যা ‘সুগার’। সেই সুগার গোত্রের তিনটি যৌগ- ‘রাইবোজ’,‘জাইলোজ’ ও ‘আরবিনোজ’-এর হদিশ মিলল দুটি উল্কাপি- ‘এনডব্লিউএ-৮০১’ এবং ‘মুর্চিসন’-এ।
এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর ১৮ নভেম্বর সংখ্যায়। গবেষণাপত্রে নাসার এক দল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এটি একটি অভিনব আবিষ্কার। কারণ এর আগে প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির উপাদান অ্যামাইনো অ্যাসিডের হদিশ মিলেছিল মহাকাশে। হদিশ মিলেছিল প্রাণ সৃষ্টির আরও দুটি উপাদান ‘ডিএনএ’ এবং ‘আরএনএ’ তৈরির উপাদানও (নিউক্লিওবেসেস)।
উল্কা আসলে তৈরি হয় কোনো গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েডের অংশ থেকে। উল্কাপি- দুটিতে এই ‘সুগার’ গোত্রের যৌগের হদিশ মেলায় এই বিশ্বাসই জোরাল হলো সুদূর অতীতে কোনো গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ডের সঙ্গে সংঘর্ষেই পৃথিবীতে সুগার গোত্রের আমদানি হয়েছিল।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রাণ সৃষ্টির জন্য আগে তৈরি হয়েছিল ডিএনএ। সেই ডিএনএ থেকেই তৈরি হয়েছিল বার্তাবাহক আরএনএ। যে আরএনএগুলো আদিম প্রাণের কোষগুলোর মধ্যে থাকা রাইবোজমের দরজায় গিয়ে কড়া নেড়েছিল। আর ওই আরএনএগুলোর আনা বার্তা ঠিকঠাক পড়তে পেরেই রাইবোজম সেই নির্দেশমতো তৈরি করেছিল বিভিন্ন রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা দিয়ে প্রোটিন তৈরি হয়েছিল। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডই হচ্ছে প্রাণ সৃষ্টির বীজ। কিন্তু আরও একটি ধারণা যে, ডিএনএ সৃষ্টির আগেই তৈরি হয়েছিল আরএনএ। কিন্তু সেই ধারণার স্বপক্ষে এত দিন কোনো প্রমাণ মিলছিল না। এবার দুটো উল্কাপিণ্ডে যে সুগার গোত্রের হদিশ মিলেছে, সেগুলোতে কিন্তু কোনো ডিএনএর উপাদান পাওয়া যায়নি। বরং এগুলো দিয়ে যে আরএনএ তৈরি হতে পারে, তার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে আমাদের এই বিশ্বাস আরও জোরালো হলো যে, ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্রও প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব। কারণ এই সুগার গোত্রের যৌগ ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্রও রয়েছে। এই সৌরম-লে যেহেতু এই যৌগের হদিশ মেলায় গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষেই যে এই ধরনের যৌগ পৃথিবীতে এসেছিল, সেই ধারণা আরও পোক্ত হলো। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রাণের বীজ যে বাইরে থেকেই এসেছিল ৪৫০-৫০০ কোটি বছর আগে, সেই তত্ত্বও জোরদার হলো। তাহলে কি এবার আমরা আশায় বুক বাঁধব যে, অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব মিলবে? সূত্র: আনন্দবাজার।