আমেরিকায় বসে সিলেটে চাকরি করছেন জেসমিন!
লিয়াকত শাহ ফরিদী, সিলেট ব্যুরো
🕐 ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অথচ দীর্ঘদিন থাকেন আমেরিকায়। সেখানে বসেই চাকরি করছেন, ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলন করছেন তিনি। এমন অভিযোগ গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ রায়গড় সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন সুলতানার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ এনে সম্প্রতি জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত আবেদন জানিয়েছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি।
অভিযোগপত্র ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেসমিন সুলতানা ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায়গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এক বছর বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও এরপর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ৫ বছর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার পরও তিনি নিয়মিত মাসিক বেতনের টাকা উত্তোলন করে আসছেন। ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এই দুটি তারিখে জেসমিন সুলতানা সোনালী ব্যাংক ঢাকা দক্ষিণ শাখা থেকে মোট ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে অভিযোগের পর জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বিয়ানীবাজার উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুমান মিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি গত ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টিতে সরেজমিন তদন্তে আসেন। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা রুমান মিয়া বলেন, আমি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি সদস্যদের বক্তব্য শুনেছি এবং বিদ্যালয়ের খাতাপত্র দেখেছি। প্রধান শিক্ষক জেসমিন সুলতানা বিদ্যালয়ে যে অনুপস্থিত তার সত্যতা পাওয়া গেছে। খুব শিগগিরই আমি এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাব।
এদিকে জেসমিন সুলতানা এখন কোথায় আছেন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার বড় ভাই রায়হান আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেসমিন সুলতানা স্বামীর আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে ভিসা পেয়ে স্বপরিবারে আমেরিকাতে বসবাস করছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান খান জানান, বিদ্যালয়ের সংরক্ষিত তথ্যমতে প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন সুলতানা যোগদান করার পর থেকে মাঝেমধ্যে স্কুলে আসতেন।
তিনি প্রতিষ্ঠানের কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, হাজিরা খাতা ও স্লিপের টাকা নিয়ে প্রায় ৫ বছর ধরে লাপাত্তা। শুনেছি স্বপরিবারে আমেরিকায় আছেন। তবে ২০১৭ সালে এসে ব্যাংক থেকে সরকারি বেতন উত্তোলন করার সময় কয়েকদিন বিদ্যালয়ে এসেছিলেন।
এ ব্যাপারে এ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়তী রানী চন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষিক অনুপস্থিতির বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অনেক আগে জানানো হয়েছে। এছাড়াও প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন বেগম আমাকে চাপ প্রয়োগ করে গ্রান্টার করে টাকা ঋণও উত্তোলণ করেছিলেন। কিন্তু এখন নিয়মিত কিস্তি না দেওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমায় উনি বিপদে ফেলে দিয়েছেন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেওয়ান নাজমুল আলম বলেন, জেসমিন সুলতানা কয়েক বছর আগে তৎকালীন শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে তিন মাসের চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়েছিলেন। এখন তিনি কোথায় আছেন আমার জানা নেই।