ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনা রোগীর চাপ কমেছে সিলেটে

হাসপাতালে পর্যাপ্ত ছিট খালি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান

লিয়াকত শাহ ফরিদী, সিলেট
🕐 ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১

করোনা রোগীর চাপ কমেছে সিলেটে

সিলেটে করোনা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি ঘটছে। প্রতিদিন শক্তের হার যেমন কমছে, তেমনি সংখ্যাও বাড়ছে সুস্থতার। করোনায় মৃত্যু অব্যাহত থাকলেও সংখ্যা নিম্নমুখী। ফলে করোনা রোগীর চাপ কমেছে সিলেটের হাসপাতালগুলোতে। জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে করোনার প্রকোপ আরো কমেছে। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে সিলেট। পথে ঘাটে বাড়ছে জনসমাগম। আগ্রহ বাড়ছে করোনার ভ্যাকসিন নিতে। সবমিলিয়ে সিলেটের করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

গত ২৪ ঘণ্টায়ও বিভাগে ১ হাজার ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র ৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে করোনায় সংক্রমিত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের সবাই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে বিভাগে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ১১১। গত মঙ্গলবার সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ৯৭ জন করোনা রোগীর মধ্যে সিলেট জেলারই ৪৮ জন। এর বাইরে সুনামগঞ্জে ১২ জন, হবিগঞ্জে ১২ জন ও মৌলভীবাজারে ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ৫৬৯। এর মধ্যে সিলেট জেলার বাসিন্দা ৩২ হাজার ৯৮৪ জন। এছাড়া সুনামগঞ্জের ৬ হাজার ১৬৮ জন, হবিগঞ্জের ৬ হাজার ৫৩৫ জন ও মৌলভীবাজারের ৭ হাজার ৮৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট পরীক্ষার ৯.৪৩ শতাংশের করোনা শনাক্ত হয়।

এর মধ্যে সিলেট জেলায় শনাক্তের হার ৬.৮০ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৮.৫১ শতাংশ, হবিগঞ্জে ১২.৯০ শতাংশ এবং মৌলভীবাজারে ২৮.০৯ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ১০.২৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৫ জন নিয়ে বিভাগে করোনায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ১ হাজার ১১১। এর মধ্যে সিলেট জেলার বাসিন্দা ৯১০ জন। এর বাইরে সুনামগঞ্জের ৭২ জন, হবিগঞ্জের ৪৭ জন ও মৌলভীবাজারের ৭২ জন মারা গেছেন করোনায়। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২৮১ জন করোনা রোগী। এ নিয়ে বিভাগে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৪৫ হাজার ৭০৫।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভ্যাকসিনেশন ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের শক্তি কমে যাওয়ায় সিলেটে করোনা পরিস্থিতির এ উন্নতি। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় ফের করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

জানা যায়, মাত্র কয়েক দিনে আগেও সিলেটের করোনা পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। আইসিইউ খালি না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে মারা গেছেন করোনা রোগী। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা বেডের জন্য ছিল হাহাকার, এখন সেখানে খালি আছে সাধারণ শয্যা। আইসিইউগুলোতেও কমছে রোগী ভর্তির হার। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২১ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ৩২৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭৯ জন। এছাড়া সুনামগঞ্জের হাসপাতালে ১৯ জন, হবিগঞ্জের হাসপাতালে ১৬ জন ও মৌলভীবাজারের হাসপাতালে ১৫ জন জন রোগী ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ৫ জন করোনা রোগী মারা গেছেন। যারা সকলেই সিলেট জেলার বাসিন্দা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমেছিল।

চলতি সেপ্টেম্বর মাসে করোনা পরিস্থিতি আরও উন্নতির দিকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, মাস্ক পরলে ও ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই কমে যাবে বলে আমার প্রত্যাশা। করোনা কমে গেছে, তাই যেভাবে ইচ্ছা ঘোরাফেরা করলে করোনা ফিরে আসতে সময় লাগবে না। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা করোনা সংক্রমণ রোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বলে জানান তিনি।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গেল মাসেও ওসমানী হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে সিটের তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি ছিল। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত ওসমানীর করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউ মিলিয়ে ৩০০টির মতো শয্যা থাকলে ভর্তি আছেন ১৩৭ জন রোগী। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৮ জন, করোনা শনাক্ত আছেন ৪৬ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ৯৩ জন।

ওসমানী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহবুবুল আলম জানান, রোগী তুলনামুলক কম থাকায় সাধারণ শয্যা খালি আছে। মাসখানেক পূর্বে অতিমাত্রায় করোনা সংক্রমণের সময় শয্যা না পেয়ে মেজেতে জায়গা দিতে হয়েছিল বহু রোগী। গেল আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। সাধারণ রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও আইসিইউতে সব সময় রোগী আছেন।

নগরীর করোনা ডেটিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিগত কয়েক মাস থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতালটি রোগীতে শতভাগ পূর্ণ থাকলেও বর্তমানে রোগী আছেন ৫৭ জন। এরমধ্যে আইসিইউতে আছেন ১৬ জন। বাকিরা আছেন সাধারণ বেডে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. সৈয়দ নাফি মাহদি জানান, হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ যথেষ্ট কম আছে। যদিও আইসিইউতে সবসময় রোগী ভর্তি থাকে। তবুও আশঙ্কাজনক রোগীর সংখ্যা কম।

জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা: তারেক আজাদ জানান, বর্তমানে তার হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ যথেষ্ট কম আছে। আমার হাসপাতালে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৪৪ জন রোগী ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকীরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। শনাক্তদের মধ্যে ২ জন আছেন আইসিইউতে। প্রতিদিন রোগী ভর্তি হলেও আগের মতো চাপ নেই। আর আশঙ্কানজনক রোগীও কম আসেন এখন। সব মিলিয়ে সিলেটের করোনা পরিস্থিতি ভালো।

সিলেট প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি ও নূরজাহান হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. নাসিম আহমদ জানান, করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট চাপ কমেছে। আমার হাসপাতালে শয্যা না থাকায় যেখানে রোগী ফিরিয়ে দিতে হতো সেখানে বর্তমানে ১১ জন রোগী ভর্তি আছে। এরমধ্যে ৩ জন আইসিইউ ও ৮জন সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সিলেটে করোনা পরিস্থিতির এই উন্নতি ধরে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।

সিলেটে বেসরকারীভাবে করোনা রোগীদের সবচেয়ে বেশী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক অধ্যাপক ডা: হিমাংশু শেখর দাস জানান, একমাস আগেও আমাদের হাসপাতাল আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা না থাকায় শত শত রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। সেই জায়গায় বর্তমানে ৪২ জন রোগী ভর্তি আছেন। তবে আইসিইউ রোগীর চাপ তেমন কমেনি। উইমেন্স হাসপাতালে বর্তমানে ১৩ জন রোগী আইসিইউতে আছেন বলে জানান তিনি।

 
Electronic Paper