ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শঙ্কা কাটছে না হাওরে

শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ
🕐 ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১

শঙ্কা কাটছে না হাওরে

সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ছাতক চার উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহত্তম হাওর ‘দেখার হাওর’। বোরো ধানের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এ দেখার হাওরের ফসল সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা যেন কাটছেই না। নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় বোরো ফসল তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাজার হাজার কৃষক। খাতাকলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে (পিআইসি) কৃষক দেখানো হলেও শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে বলে রয়েছে অভিযোগ। এদিকে বাঁধ নির্মাণে জানা গেছে, কচ্ছপ গতি ঝুঁকিতে ফেলছে ৩৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল। প্রকল্পের কাজের নির্ধারিত সময়সীমা আর সপ্তাহ খানেক বাকি থাকলেও মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের।

কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার ও ভাঙা বন্ধকরণে এবার দক্ষিণ সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওরে ৬০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। জেলার সবচেয়ে বড় ‘দেখার হাওর’-এর মহাসিং নদীর দুপাড়ে ১২টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর এসব প্রকল্পে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্পে কাজ শুরুই হয়নি। কোনো কোনো প্রকল্পে এখনো শেষ হয়নি মাটি ফেলার কাজ। দেখার হাওরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজার উথারিয়ার অর্ধেকের বেশি জায়গায় পড়েনি মাটি। এদিকে কাজ বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়সীমার দিন দিন ফুরিয়ে আসছে।

১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকাল ৫টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উথারিয়ার মূল ক্লোজার উন্মুক্ত ছিল। বাঁধে মাটি ফেলা চলমান থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কিত এলাকার কৃষক। বাঁধ টেকসই করতে ক্লোজারে বস্তা, দুরমুজসহ অন্যান্য কর্মকা- চোখে পড়েনি।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট পিআইসিরা বলেন, বাঁধে মাটি ফেলার কাজ শেষ হলে এসব কাজ শুরু হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজের নির্ধারিত সময়ের আর সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। তারা জানান, প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটর হাতে দেওয়া হয়েছে কাজ। ফলে ফসল নিয়ে ঝুঁকি থাকলেও কথা বলতে নারাজ। তাতে নাকি রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। তারা আরও অভিযোগ করেন, খাতাকলমে কৃষকদের পিআইসি করা হলেও বাস্তব ঠিক তার উল্টো। ওই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করছে সব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পিআইসি সভাপতি বলেন, ‘যারা বাঁধের কাজ পাইছে এরাতো গরীব মানুষ। এরার কি ক্ষমতা আছে এত বড় কাজ করার। নামে পিআইসি হলেও বাঁধের মূল নিয়ন্ত্রণ অন্যদের হাতে। প্রথম বিল পাওয়ার পর পিআইসিরা ৫ হাজার টাকা করে পাইছিল। কাজ করছে সিন্ডিকেট। বিল উঠিয়ে তাদের কাছেই টাকা দেওয়া হবে। বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হলে পিআইসিদের ধরা হবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রকরা এমনভাবে আড়ালে রয়েছেন তাদের নামনিশানাও পাওয়া যাবে না।’

এদিকে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে ৪০ নং পিআইসির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘বাঁধের সব দায়বার আমার। সিন্ডিকেট টিন্ডিকেট কিছুই না। মাটির কাজ মইনুল ভাইকে দিয়েছি।’ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে বলেই জানান তিনি।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের সহকারি প্রকৌশলী মাহবুবল আলম বলেন, ‘দেখার হাওরে ১২ প্রকল্পে বাঁধে ৬০-৭০ শতাংশ মাটি ফেলার কাজ শেষ। নির্ধারিত সময়ে কাজ উঠিয়ে আনতে পিআইসিদের চাপ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আমরা এখনও তাদের টাকা দিতে পারছি না।’ সিন্ডিকেটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গাইডলাইন মেনেই কৃষকদের মাধ্যমে পিআইসি করা হয়েছে। মাঠে তাদেরকেই পাচ্ছি। তারা যদি কাজ করতে গিয়ে কারও হেল্প নেয়, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।’

 
Electronic Paper