ফাল্গুনের আগুন শিমুলবাগে
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ
🕐 ১২:১২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
আগে ১৩ ফেব্রুয়ারিতে এসে ভর করত ফাল্গুনের প্রথম দিন। বাংলার বর্ষপঞ্জি পরিবর্তনে এখন তা চৈত্রসংক্রান্তি। তারপরও এদিনে ফাল্গুনী সাজে মেতে ওঠেন তরুণ-তরুণীরা। মাঝবয়সীদের মাঝেও গতকাল শনিবার এদিন ফাগুনের উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে। করোনাকালীন প্রায় নিস্তেজ পৃথিবীতে ফাগুনের আগমনী বার্তা বেশ খানিকটা গতি সঞ্চার করেছে যেন। প্রায় এক বছরের ভয়-ভীতি, উৎকণ্ঠা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে মানুষ। বসন্তের শুরুতে প্রকৃতিতেও এসেছে পরিবর্তন। চারদিক যেন শিমুল ফুলে সজ্জিত।
তরুণীর খোঁপায় জায়গা করে নিয়েছে গোলাপ, গাঁদা, শিমুল ফুল। বাসন্তী শাড়ি আর পাঞ্জাবী সাজে সেজেছেন তরুণ-তরুণীরা। ঋতুরাজ রাজ বসন্তে সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমীদের মেলবন্ধন যোগ করেছে নতুন মাত্রা। চৈত্রসংক্রান্তিতেই ফাল্গুনের আগুন লেগেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শিমুলবাগে। বসন্তকে স্বাগত জানাতে শিমুল বাগের গাছে গাছে রক্তিম সাজ। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। প্রকৃতিকে উজার করে দিচ্ছেন ভালোবাসা।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁও গ্রামে ২ হাজার ৪ শতক জমিতে গড়ে ওঠা শিমুল বাগান ভ্রমণ পিপাষুদের কাছে অন্যতম স্থান হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। এটি দেশের মধ্যে বৃহৎ শিমুল বাগান। রূপময় যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে উঠেছে এ বাগান। এর ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। লাল পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় সজ্জিত শিমুল বাগান আর মেঘালয়, মাঝে যাদুকাটা নদীর যাদুতে পর্যটকরা এ বাগানে বারবার ফিরে আসেন বসন্তে।
বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রহমান মল্লিক সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন শিমুল বাগানে। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে নিরাপদে ঘোরাফেরা করা যায় এ বাগানে। এর পাশের নদীর তীর নয়নাভিরাম। যদিও পথে কিছুটা জটিলতা আছে। সেটা যানবাহন ও রাস্তা সংক্রান্ত। তবুও বাগানে এসে ভালো লেগেছে। স্থানীয়দের অনেকে বলেন, ‘দেশের বৃহত্তম এ শিমুল বাগান পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ভ্রমণপিপাষুরা বেড়াতে আসেন।
বাগানে ঘুরতে আসা তরুণী সেলিনা জানান, আমরা মুগ্ধ। প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় কাটাতে পারছি। অনেক ভালো লাগছে। তিনি বলেন, নদী-পাহাড়ের সম্মিলন এ শিমুল বাগানে। এখানে এলে যে কারোর মন ভালো হতে বাধ্য।’
জানা যায়, জয়নাল আবেদীন নামে স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেড় যুগ আগে ২০০২ সালে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে শুধুই সৌখিনতার বসে এই শিমুল বাগান গড়ে তোলেন। আর এখন তা হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাষুদের পিপাসা মেটানোর স্থান। শিমুল বাগানের সঙ্গে সেখানে লেবুর বাগানও গড়ে উঠেছে। বসন্ত এলে যখন একসঙ্গে দু’হাজার শিমুল গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে তখন পর্যটকদের নজর না কেড়ে উপায় থাকে না।