ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সুনামগঞ্জে পাউবোর ফসলরক্ষা বাঁধে গড়িমসি

শহীদনূর আহমেদ
🕐 ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২১

সুনামগঞ্জে পাউবোর ফসলরক্ষা বাঁধে গড়িমসি

২০১৭-এর কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে পাউবোর বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ বাস্তবায়নকল্পে প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদের এক মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি ৮০ ভাগ প্রকল্পে। এছাড়াও ৩০টি প্রকল্পে গঠিত হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। জেলার ফসলরক্ষা বাঁধের এমন হালচিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও হাওরের সাধারণ কৃষক। নির্ধারিত সময়ে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় ফসলের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। দ্রুততম সময়ে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোতে কাজ শুরু ও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা জানিয়েছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। নতুবা ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জেলার বিভিন্ন হাওরে ৯৫১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৭৮৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময় ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারিতে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ২৩ জানুয়ারি শনিবার দুপুর পর্যন্ত অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৬০টি প্রকল্পে। শতকরা হিসাব করলে প্রায় ৮০ ভাগ প্রকল্পে এখনো কাজই শুরু হয়নি। এছাড়াও ৩০টি স্কিমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়নি বলে জানা যায় এ তথ্যে।

জানা যায়, এবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি প্রকল্পে এখনো কাজ শুরু হয়নি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৪১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও কাজ শুরু হয়েছে ২৭টিতে। ধর্মপাশা উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলায় ১৮৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে অনুমোদিত ১৬৯ প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৪টিতে। তাহিরপুর উপজেলায় ৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৮২ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও কাজ শুরু হয়েছে মাত্র চারটিতে। জামালগঞ্জ উপজেলায় ৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৪৪ প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৬টিতে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় এবার ৪৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৪৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত ২২টি প্রকল্পে কাজ শুরু বাকি রয়েছে। দিরাই উপজেলায় অনুমোদিত ১২০ প্রকল্পের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৬টিতে। এ উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে ৯৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কথা রয়েছে।

জেলার সবচেয়ে বেশি হাওরের উপজেলা শাল্লায় ১৪৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৫৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের এক মাসে মাত্র ২১টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও এখনো ১০টি প্রকল্পে পিআইসি গঠন হয়নি। কাজ শুরু হয়েছে মাত্র চারটিতে। এ উপজেলায় ৭৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করার কথা রয়েছে। জেলার সীমান্তিক উপজেলায় দোয়ারাবাজারে ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পের ৮টিতে কাজ শুরু হয়েছে ৭টিতে এখনো পিআইসি গঠন হয়নি। জেলার ছাতক উপজেলায় হাওর কম থাকায় কম প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ১৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও ১৩ প্রকল্পে পিআইসি গঠন হয়নি। কাজ শুরু হয়েছে মাত্র তিনটিতে।

১১ উপজেলায় বাঁধ নির্মাণে কাজের অগ্রগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, এক মাস পেরুলেও ৮০ ভাগ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি। যা দুঃখজনক। কাজের অগ্রগতি বিষয়ে আজকেও (শনিবার) আমাদের সংগঠনের নেতারা পাউবোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করেছি। ফসলের সুরক্ষা নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করেছি। পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় ২০১৭ সালের মতো হাওর ডুবির ঘটনা ঘটলে ছাড় দেওয়া হবে না। কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে সময় নেওয়া ও হাওরে বিলম্বে পানি নিষ্কাশনের কারণে পিআইসি গঠনে বিলম্ব ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হলেও নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের কারণে ৩০টি প্রকল্পে পিআইসি গঠন করতে বিলম্ব হচ্ছে। এক-দুদিনের মধ্যে ২৩টি স্কিমে পিআইসি গঠন করা হবে। সম্ভাব্যতা না থাকায় ৭টি প্রকল্প বাতিল হতে পারে। অনুমোদিত প্রকল্পে নানা কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে আমরা আশাবাদী।

 
Electronic Paper