ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হবিগঞ্জে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ‘প্রেমিকা’কে খুন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ১২:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮

হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়ে তিন বন্ধু মিলে তাঁকে গলা টিপে খুন করেছে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর আদালতে খুনের বর্ণনা তুলে ধরে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নিহত রেহেনা আক্তার রিমার কথিত প্রেমিক শিপন মিয়া।

শনিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ আমলি আদালত-৬-এর বিচারক নাসরিন আক্তার তাঁর খাস কামরায় শিপনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে রাতে এর সত্যতা নিশ্চিত করে মাধবপুর থানায় প্রেস ব্রিফিং করেন মাধবপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহম্মেদ। তিনি শিপনের জবানবন্দির সারাংশ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
এস এম রাজু আহম্মেদ জানান, পাঁচ-ছয় মাস আগে মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী বাজারে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে একই উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামের প্রবাসী আবদুল আওয়ালের স্ত্রী রেহেনা আক্তার রিমার সঙ্গে কমলানগর গ্রামের শাহেদ মিয়ার ছেলে শিপন মিয়ার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে রেহেনা ও শিপন প্রায়ই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ এবং বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে বেড়াতে যেত। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেহেনা স্বামীর বাড়িতে না থেকে বাবার বাড়ি রাজাপুর গ্রামে দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন। বাবার বাড়িতে ঝগড়া হওয়ায় কাজের সন্ধানে রেহেনা গাজীপুর কোনাবাড়ীতে একটি পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের কাজ নেন।
গত ৯ জুন রেহেনা শিপন মিয়াকে মোবাইল ফোনে বলেন, গাজীপুর থেকে তাঁকে নিয়ে আসার জন্য। শিপন গাজীপুর গিয়ে রেহেনাকে নিয়ে মধ্যরাতে মাধবপুর হাইওয়ে হোটেলের সামনে নামে। এর পর তারা রাতেই সিএনজি অটোরিকশা করে কমলানগর গ্রামে যায়। সেখানে অপর দুই বন্ধুকে নিয়ে রেহেনাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু রেহেনা বিষয়টি টের পেয়ে বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে তিনি চিৎকার শুরু করলে শিপন মিয়া রেহেনার গলা টিপে ধরে চিৎকার করতে নিষেধ করে। এরপরও রেহেনা চিৎকার করলে ঘটনাটি এলাকাবাসী জেনে যাবে এবং তারা বিপদে পড়বে- এ ভয়ে তিনজন মিলে রেহেনাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আরো জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন বন্ধু মিলে বড় লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে রেহেনাকে হত্যা করে। রেহেনার সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল ফোন, কানের দুল, নাকফুলসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে মাধবপুরে স্থানীয় দোকানে বিক্রি করে দেয়। এরপর তড়িঘড়ি করে পাশের বাড়ি থেকে তারা কোদাল এনে মাটি খুঁড়ে একটি শসার জমিতে তাকে মাটি চাপা দেয়। ঘটনার তিন দিন পর ১৩ জুন পুলিশ খবর পেয়ে ওই স্থান থেকে বিকৃত অবস্থায় রেহেনার লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় কেউ তার লাশ শনাক্ত করতে পারেনি। এ ঘটনায় কাশিমনগর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রেহেনার ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন বিক্রি হওয়ার সূত্র ধরে নিহতের পরিচয় এবং খুনিদের শনাক্ত করেন। শুক্রবার বিকেলে পুলিশ শিপন মিয়াকে উপজেলার খাটুরা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিপন মিয়া খুনের কথা স্বীকার করে। এ পরিস্থিতিতে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে আদালতে হাজির করলে সে বিচারকের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, পলাতক অন্য খুনিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 
Electronic Paper