ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জরাজীর্ণ ঘরেই পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
🕐 ৩:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৭, ২০২১

জরাজীর্ণ ঘরেই পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ১০ সন্তানের জনক মানসিক রোগী এলাছ মিয়া জরাজীর্ণ বসত ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের যাত্রা পাশা (দীঘির পাড়) গ্রামের বসবাস করেন তিনি। যাত্রা পাশা গ্রামের মৃত সফর উল্লাহ ছেলে এলাছ মিয়া (৫৫) দীর্ঘ ২ বছর যাবত অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার অভাবে বাড়িতেই মানবেতর সময় পার করছেন।

তাহার ৯ কন্যা সন্তান এবং ১ পুত্র সন্তানকে নিজে খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে কৃষি কাজ করে লালন পালন করেছেন।

ধর্ম প্রিয় ও সততার সাথে হালাল রোজগার করে পরিবারের সকল চাহিদা মেটাতে গিয়ে দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এলাছ মিয়া। শত অভাব অনটনের মাঝেও মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা যেন মিস হতো না তার।

শত অভাব অনটনের মাঝে কন্যা সন্তানরা বড় হয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ শুরু করেন। এতে করে কিছুটা পরিবারের হাল ধরেন তারা। কিছুদিন যেতে না যেতেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ফের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হয় এ পরিবারটিকে। পরে তার একমাত্র ছেলেটিও বিয়ে করে পৃথক হয়ে যায়।

এলাছ মিয়ার স্ত্রী রিজিয়া খাতুন ( ৪৫) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ৯ মেয়ে এবং ১ ছেলেকে নিয়ে সংসারের চালাতে অনেক কষ্ট হলেও অনেকটা মনের দিকে সুখেই ছিলাম। মেয়েরা গার্মেন্টস চাকরি করে অনেক সহযোগিতা করতো। কিন্তু এখন তো তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমার স্বামী হঠাৎ করে মানসিক ভাবে অসুস্থ ও বয়স বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের হাল ধরার মতো আমি ছাড়া এখন আর কেউ নেই।

অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচসহ পরিবারের খরচ জোগানো আমার পক্ষে অনেক কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ছোট ১ মেয়ে এবং অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে প্রচন্ড শীতের মাঝে আমাদের এই জরাজীর্ণ ঘরেই জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

ছোট মেয়ে ফাইজা আক্তার (১০) ১৬নং যাত্রাপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস তৃতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। এই অভাব অনঠনে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেন মেয়েটির মা রিজিয়া খাতুন জানান।

স্ত্রী রিজিয়া খাতুন জানান, কুয়াশার পানিতে প্রতিদিন বিছানা পত্রসহ ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অল্প একটু বৃষ্টি হলে তো আর দুর্ভোগের সীমাই থাকে না। এমনিতেই খাইতে পাই না, এখন যদি এভাবে কুয়াশার আর বৃষ্টির পানিতে এসব নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মরন ছাড়া আর কোন রাস্তা নাই।

পরিবারের খরচ যোগাতে নিজেকেই যেতে হয় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে। উপড়ে চালা নেই, বেড়া গুলোও ভাঙ্গা, জীবিকার তাগিদে এই ভাঙ্গা ঘরে স্বামীকে একা ফেলে কাজ করেও শান্তি পাই না। কিছু টাকা রোজগার করতে পারলে কয়েক দিন পর পর ছুটে আসি স্বামীকে চিকিৎসা করানোর জন্য।

এলাকাবাসী এবং জন প্রতিনিধিসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে হাত পাতলে কারো কোন সারা পাইনি, এমনকি স্বামীর চিকিৎসার জন্য সহায়তার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করেও কোন লাভ হয়নি। বরং আরও নানা কথা শুনতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিবেশী বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক শেখ তুহিন বলেন, শেখ হাসিনা তো শত শত ঘর অসহায় জনগণকে উপহার দিচ্ছেন, তার মাঝে একটি ঘর যদি এই অসহায় এলাছ মিয়াকে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দিতেন তাইলে তার জীবনে সেরা একটা উপহার পেত।

 
Electronic Paper