ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সেতু আছে সড়ক নেই

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ৩:৫০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৮

প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী-কলকলিয়া সড়কে কালনী সেতু। প্রায় তিন বছর আগে কালনী নদীর ওপর এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় ব্যবহার হচ্ছে না সেতুটি। জমি অধিগ্রহণ, নকশা নিয়ে জটিলতা আর বিশ্বব্যাংক অর্থ ফিরিয়ে নেওয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ আটকে আছে বলে জানা গেছে। ওই সড়ক নির্মাণে প্রায় ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাওরপাড়ের দিরাই উপজেলার সঙ্গে সিলেট ও ঢাকার সড়ক দূরত্ব কমাতে সেতুটি নির্মিত হলেও তা স্থানীয়দের কোনো কাজে আসছে না। তাই সেতুর সংযোগে সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহল।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ-২ আসন (দিরাই-শাল্লার) প্রয়াত সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে ২১০ মিটার দীর্ঘ ও ৬ দশমিক ১০ মিটার প্রস্ত সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৩ সালে শুরু হয়। শুরুতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ২২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। বলা হয়েছিল, এ সেতু নির্মিত হলে কালনী-কলকলিয়া সড়কটি দিরাই থেকে পূর্ব দিরাই হয়ে যাওয়া সুনামগঞ্জ-পাগলা-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে যুক্ত হবে। ফলে দিরাই-শাল্লার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও সিলেটের দূরত্ব কমে আসবে। এছাড়াও কালনী নদীর পূর্বপাড়ে পূর্ব দিরাইয়ের দেড় লাখ অধিবাসী সরাসরি সড়কপথে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবে। তবে তিন বছর আগে নির্মাণ সম্পন্ন হলেও এ পর্যন্ত কালনী-কলকলিয়া সড়কের কাজ শুরু না হওয়ায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। এতে করে যাতায়াতের দুর্ভোগও কমছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমে জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ আটকে যায়। পরে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে আপত্তি জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা হাওরের মধ্যে হওয়ায় সেখানে সড়ক নির্মাণের ফলে হাওড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। আপত্তির কারণে নতুন করে সড়কের নকশা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
পূর্ব দিরাইয়ের অধিবাসী আব্দুল বাসির জানান, কালনী-কলকলিয়া ২০ কিলোমিটার সড়কের জমি অধিগ্রহণ এখনো শেষ হয়নি। সংযোগ সড়ক না হওয়ার ফলে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না যোগাযোগ উন্নয়নে।
জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী বেগ বলেন, দিরাই শাল্লা জেলার সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল। হাওরপাড়ের এ দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে আছে। কালনী সেতু চালু হলে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত হতো। চলাচলে এলাকার মানুষের ভোগান্তি কমে আসত। কিন্তু এখনো এ সড়কের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি। সড়কের কাজ না হওয়ায় সেতুটিও কোনো কাজে আসছে না। সড়ক ছাড়া কেবল সেতু ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
তবে জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারটি স্বীকার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমদ বলেন, ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির জন্য ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখন সড়ক নির্মাণকাজ বাকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পটি প্রথমে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের আওতাধীন ছিল। কিন্তু বিলম্বের কারণে তারা অর্থ ফিরিয়ে নেয়। এখন প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্পের মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনেই সড়কের কাজ হবে। তবে কাজ শুরু হতে কিছুটা দেরি হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক অর্থ ফিরিয়ে নেয়ায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরুতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পভুক্ত হওয়ায় সে জটিলতার অবসান হল। আশা করছি, দ্রুতই সড়কের কাজ শুরু হবে।

 
Electronic Paper