চা-কন্যাদের করোনাকাল
দিপু সিদ্দিকী, সিলেট
🕐 ১১:০০ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২০
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা দেশে সবকিছু সীমিত আকারে চললেও সিলেট অঞ্চলের চা-বাগানগুলোতে উৎপাদন পুরোদমে অব্যাহত রয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই বাগানে কাজ করছেন শ্রমিকরা। তবে করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখা চা-শ্রমিকদের দিনকাল চলছে ধুঁকে ধুঁকে। দেশে সাধারণ ছুটিসহ নানা কারণে জীবনযাত্রা স্থবির থাকায় বাগানের শ্রমিক লাইন থেকে পুরুষরা বের হতে না পারায় ঘরে ঘরে নিদারুণ কষ্ট হানা দিয়েছে। কিছু সরকারি ত্রাণ আর দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের।
`দুটি পাতা, একটি কুঁড়ি’র অঞ্চল হিসেবে সারা দেশে পরিচিত সিলেট। নিপুণ হাতে কুঁড়িসহ এই পাতা তুলে কারখানায় পাঠানোর কাজ করেন চা-কন্যারা। টিলা থেকে টিলায় প্রতিদিনই করোনার এই দুর্যোগকালে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সিলেটের অধিকাংশ বাগানেই চা-পাতা উত্তোলনে সামাজিক দূরত্ব ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে মনোযোগী চা-কন্যারা। তবে ওজনের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে চা-শ্রমিকদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। এই মহামারিকালে দৈনিক মাত্র ১২০ টাকা মজুরিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
ঝুঁকির বিষয়টি জেনেই জীবনের তাগিদে প্রতিদিন সকালে চা-কন্যারা বের হন কাজে। গত ২৭ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই চা-বাগানের যে সকল বাসিন্দা বাগানের বাইরে কাজ করতেন তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে যাপিত জীবনে নেমে এসেছে হতাশা। তবে একই পরিবারের একাধিক চা-শ্রমিক কাজ করায় কোনো কোনো পরিবারে রয়েছে কিছুটা স্বস্তি।
এদিকে চা-বাগানের শ্রমিকরা সরকারি পর্যায়ে কিছু ত্রাণ সহায়তা পেলেও তা অপ্রতুল। পাশাপাশি চা-বাগানের ডিসপেনসারিতে শ্রমিকরা প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও একটু জটিল রোগীদের জন্য ভরসা সরকারি হাসপাতালগুলো।
সিলেটের বুরজান চা-বাগান শ্রমিক সভাপতি বিলাস ব্যানার্জি বলেন, সিলেটে ১৩৪টি চা-বাগানে কাজ করছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। চা-পাতা সংগ্রহকারী নারীরা দলে দলে কাজ করছেন। শ্রম আইনে বলা থাকলেও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। আবার অনেক শ্রমিক একই গ্লাসে পানি পান করছেন। করোনার সংক্রমণ রোধে আগে থেকেই বাগানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শ্রমিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে। তাদের মাস্ক-সাবান দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে। শ্রমিকরা তা মেনেও চলছেন।
হিলুয়া চা-বাগানের টিলাবাবু সৈয়দ সুয়েব আহমদ বলেন, আমরা শ্রমিকদের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। তাদের জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ সাবানসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী প্রদান করেছে।
হিলুয়াছড়া চা-বাগানের শ্রমিক সাবেক মহিলা মেম্বার রাধা রানী বলেন, আমরা চা-পাতা তোলার কাজে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। চা-পাতা তুলতে শ্রমিকরা দূরত্ব নিশ্চিত করেন।
সরকারি সহায়তা পেলে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে পারে। করোনা মহামারি শেষে আবারো নতুন পাতার ঘ্রাণে চারদিক ম ম করবে, স্বস্তি ফিরবে চা-বাগানে চা-শ্রমিকদের পরিবারে এমন প্রত্যাশা।