ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে এক সপ্তাহে নিহত ৯

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ০৬, ২০১৮

সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিক্ষার্থীসহ নয়জন নিহত ও ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বজ্রপাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের মধ্যে হাওরের ধান কাটার শ্রমিক ও কৃষক পরিবারের সদস্য এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।

গত শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে বজ্রপাতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার    গৌরারং ইউনিয়নের শাফেলা গ্রামের এখলাছুর রহমান (৫৫) ও একই  গ্রামের রাধিকা রানী দাসের মেয়ে একা রানী দাস (১৮)। সে এবার সদর উপজেলার ইসলামগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
এর আগে, গত ২৯ এপ্রিল জেলা সদরে একজন, ৩০ এপ্রিল দক্ষিণ সুনামগঞ্জে একজন, ১ মে সুনামগঞ্জ সদরে একজন, জামালগঞ্জে দুজন, বিশ্বম্ভরপুরে একজন এবং ৪ মে তাহিরপুরে একজন মারা যান। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। তাছাড়া কালবৈশাখীতে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, সকালে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখে কৃষক ও শ্রমিকরা ঘরে ফিরতে পারেন না। হাওর থেকে গ্রামগুলো অনেক দূরে থাকায় শ্রমিকরা দ্রুত নিরাপদে এসে আশ্রয় নিতে পারেন না, ফলে বজ্রপাতের শিকার হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার জামালগঞ্জের পাগনার হাওরে বজ্রপাতে মারা যান কৃষক কমলাকান্ত তালুকদার। আহত হন তার দুই ছেলে ও এক প্রতিবেশী। গত বুধবার সকালে একই এলাকায় বজ্রপাতে আহত হন কৃষক সেতু সরকার। গত ১ মে বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর এবং জামালগঞ্জে আরও তিন শ্রমিক মারা যান।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বীরগাঁওয়ের ইমদাদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সাইফুজ্জামান বলেন, ‘বিশাল হাওরে আকস্মিক ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে  দ্রুত গ্রামে এসে পৌঁছতে পারে না কৃষক। ফলে বজ্রপাতের শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ধান কাটার শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষ। তাই হাওরগুলোতে বিশেষ টাওয়ারের মাধ্যমে বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।’
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের কৃষক মনির উদ্দিন, মুজিবুর রহমান, হরমুজ আলী, তাহিরপুরের হাওর পাড়ের কৃষক ফেরদৌস আলম, সাদেক আলী, সবুজ মিয়া জানান, এবার জেলার প্রতিটি হাওরেই বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে আবহাওয়ার বৈরী আচরণে আমরা আবারও চিন্তার মধ্যে আছি। বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে সৃষ্টি হয়। বজ্রপাতের ভয়ে শ্রমিকরা ধান কাটতে হাওরে যেতে চায় না।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, প্রকৃতির বৈরী আচরণ হাওর পাড়ে শ্রমিক সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারপরও কৃষকরা নিজেদের মতো করে পরিবারের লোকজন নিয়েই পাকা বোরো ধান কেটে শেষ করার চেষ্টা করছে। বজ্রপাত প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালক স্বপন কুমার সাহা জানান, জেলার বেশিরভাগ পাকা বোরো ধান কেটে ফেলেছে কৃষক। বাকি বোরো ধান দ্রুত কাটার জন্য বলছি আমরা। আশা করি এবার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হবে না।

 
Electronic Paper