ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এবার চা বাগানে করোনার হানা

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
🕐 ৫:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ০১, ২০২০

চা বাগানে করোনার ঝুঁকি আছে জানিয়ে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বার বার ছুটির কথা বলা হলেও আমলে নেয়নি মালিকপক্ষ। উপরন্তু বলা হয়েছে চা বাগানের সবুজ বেষ্টনীর ভেতরে করোনা আসবে না। মালিকদের এমন ধারণায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবার চা বাগানে হানা দিয়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস।

সম্প্রতি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আভাস তন্তবায় (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার রাতে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আক্রান্ত হয়েছে তার চাচাতো ভাইও। লকডাউন করা হয়েছে চ-িছড়া চা বাগানের ১২টি বাড়ি। তবে ভাইরাস কতটা ছড়িয়ে পড়েছে কেউ জানে না। কারণ চা শ্রমিকদের করোনা বিষয়ে সচেতনতা নেই।

দেশে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে কর্মরত প্রায় দুই লাখ শ্রমিক। এর মধ্যে ১৩৪টি বাগানই সিলেট বিভাগের তিন জেলার।

করোনভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রায় বেশিরভাগ চা বাগানেই কাজ করে যাচ্ছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। করোনা রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সব সেক্টরেই সরকারের নির্দেশে ছুটি কার্যকর হলেও চা বাগান বন্ধ রাখেনি মালিকরা। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরজমিনে দেখা যায়, মাধবপুরে চা বাগান চলছে স্বাভাবিক গতিতে। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার এর আগে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সেই ছুটি বাড়নো হয়েছে ৫ মে পর্যন্ত। কিন্তু মাধবপুর উপজেলার প্রায় বেশিরভাগ চা বাগানে ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন চা বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।

জানা যায়, এক ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন চা শ্রমিকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চা বাগানের শ্রমিকদের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই চা শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা আসার পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে চা শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু তাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত চা বাগানে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। চুনারুঘাট চ-িছড়া চা বাগানে করোনা আক্রান্ত শিশু আভাস তন্তবায় শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে মারা গেছে। গত শনিবার রাতে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্ত হয়েছে তার চাচাতো ভাইও। লকডাউন করা হয়েছে চ-িছড়া চা বাগানের ১২টি বাড়ি। ভাইরাস কতটা ছড়িয়ে পড়েছে কেউ জানে না। কারণ চা শ্রমিকদের করোনা বিষয়ে সচেতনতা নেই।

এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা আদিবাসী সমিতির সভাপতি সাইমন মুর্মু বলেন, এতদিন বলা হয়েছে চা বাগানের সবুজ বেষ্টনীর ভেতরে করোনা আসবে না। কিন্তু এখন তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে অনুরোধ দয়া করে চা শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে মজুরিসহ ছুটি প্রদান করুন। না হলে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।

লস্করপুর ভ্যালির সভাপতি রাবিন্দ্র গৌড় বলেন, লস্করপুর ভ্যালির ১৯ হাজার চা শ্রমিক ও তাদের পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছে। সরকারকে ভুল বুঝিয়ে চা শ্রমিকদের করোনা ঝুঁকিতে কাজ করানো হচ্ছে। চা বাগানে পাতা উত্তোলনের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হলেও পাতা উত্তোলনের জন্য শ্রমিকদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবহন দিয়ে নেওয়া হয় তখন কিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে। শুধুমাত্র পাতা উত্তোলনের সময় ছাড়া আর কোনো জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না।

 
Electronic Paper