সমরেশ মজুমদারের লেখক হওয়ার গল্প
সিলেট ব্যুরো
🕐 ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
‘বই প্রকাশের গল্প’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সিলেটে লেখক হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমরেশ মজুমদারের লেখক হয়ে ওঠার গল্প মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছেন সিলেটের তিন শতাধিক ভক্ত ও লেখক এবং শিক্ষাবিদ।
অনুষ্ঠানে সমরেশ মজুমদার বলেন, কলকাতার দেশ পত্রিকায় আমার প্রথম একটি গল্প ‘অন্তর আত্মা’ ছাপানোর জন্য দিয়েছিলাম। প্রথমে তারা বলল, এক সপ্তাহ পর ছাপা হবে। এরপর খোঁজ নিয়ে জানা গেল এক মাস পর ছাপা হবে। প্রায় দেড় মাস পর গল্পটি ফেরত দেয় দেশ পত্রিকা। এরপর কয়েক বন্ধুকে নিয়ে পত্রিকাটির সাহিত্য সম্পাদককে গল্প না ছাপানোর কারণ জানতে চাই। তখন ওরা বলল, গল্পটি ছাপাখানায় পাঠানোর বদলে ভুল করে আপনার ঠিকানায় ফেরত গেছে। রেখে যান এক সপ্তাহ পর এটি ছাপা হবে। পরে কথামতো গল্পটি ছাপা হয় এবং ১৪ টাকা মাইনে পাই। এরপর গল্পটি পাঠকমহলে সমাদৃত হলে দেশ পত্রিকা পরে নিয়মিত আমার গল্প ছাপাতে শুরু করে। এভাবেই একজন সমরেশ মজুমদার লেখক হয়ে উঠি। সৃজনশীল বইয়ের বিপণিবিতান বাতিঘরের আমন্ত্রণে এবারই প্রথম সিলেট সফরে আসেন তিনি।
ওপার বাংলার নন্দিত এ লেখক মুখোমুখি হন সিলেটের লেখক-পাঠকদের। গল্পের সুরে, হাস্যরসে শোনালেন তার জীবন-বাস্তবতা এবং সৃষ্ট সাহিত্যকর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ের কথা।
ঘন্টাব্যাপী বক্তব্যে নিজের শুরুর বিষয়ে সমরেশ মজুমদার জানান, মঞ্চনাটকের প্রতি খুব টান ছিল। প্রথম গল্পও লেখেন যে নাট্যদলটির সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন সেই দলের একটি চিত্রনাট্য রচনার জন্য। যার নাম ছিল ‘অন্তর আত্মা’। পরে সেটি ছাপানোর জন্য দেশ পত্রিকায় পাঠান। সেখানে প্রথমবার ছাপা না হলেও দেশ পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক বিমল করের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গল্পটি ছাপান।
প্রথম গল্পের সম্মানীর টাকা বন্ধুদের নিয়ে কফি খেয়ে উড়িয়ে দেন তিনি। খাওয়ার লোভে বন্ধুরা তাকে আরও লেখার জন্য তাগিদ দেন। সেই কফি খাওয়া ও খাওয়ানোর লোভ থেকেই পর্যায়ক্রমে সাহিত্যিক হয়ে ওঠেন সমরেশ মজুমদার।
লেখক, সাংবাদিক, গবেষক সুমন কুমার দাশের পরিচালনায় বক্তব্য শেষে উপস্থিত লেখক-পাঠকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সমরেশ মজুমদার। এ সময় উঠে আসে ‘সাতকাহনে’র দীপাবলির কথাও। লেখক বলেন, আমার বাড়ির পাশে বারো বছরের একটি মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের দিন সকালে সে আমার হাত ধরে বলেছিল, কাকু, আমাকে বাঁচাও। অনেক চেষ্টা করেও সেদিন মেয়েটির বিয়ে ঠেকাতে পারিনি। তবে বিয়ের আটদিন পর বিধবা হয়ে মেয়েটি ফিরে এসে আমাকে বলেছিল, কাকু, আমি বেঁচে গেলাম। এখান থেকেই দীপাবলি চরিত্রটি সৃষ্টি হয়।
সমরেশ মজুমদার বলেন, আমরা পুরুষরা মেয়েদের ওপর নির্ভরশীল জীবনযাপন করি। কিন্তু দীপাবলি ধরনের মেয়ে না। কোনো পুরুষই তাকে স্ত্রী হিসেবে চান না। আর মেয়েরা তাকে জীবনের আদর্শ মনে করে। এটাই এ চরিত্রের সার্থকতা।
দীর্ঘ এ আলাপচারিতায় বারবার উঠে আসে তার উপন্যাস-ত্রয়ী ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’ ও ‘কালপুরুষ’ প্রসঙ্গ। উপন্যাস-ত্রয়ী নিয়ে সমরেশ মজুমদার জানালেন, এ তিনটির মধ্যে প্রথম দুটি অনেকটা জোর করে লেখা। মন থেকে লেখেননি। বাধ্য হয়েই লিখেছেন। ‘উত্তরাধিকার’ প্রকাশের পরে পাঠকদের আগ্রহের কারণে প্রকাশক সাগরময় ঘোষের নির্দেশে বাকি দুই পর্ব লেখা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন লেখক বাদল সৈয়দ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপংকর দাশ।