নৌ-দুর্ঘটনায় শঙ্কিত হাওরবাসী
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০১৮
হাওরের রাজধানী নামে খ্যাত সুনামগঞ্জে বর্ষাকালে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো ইঞ্জিনচালিত নৌকা। বর্ষায় হাওরে হাওরে নীল পানির ঢেউ খেলা করে প্রকৃতির ঢাকে। হাওরের সম্পদ ও সৌর্ন্দয্যে যেমন হাওরবাসী ফলুকিত তেমনি হাওরের বুকে ঘটা নৌ-দুর্ঘটনা নিয়ে শঙ্কিত হাওরবাসী। গত ৮ বছরে ২৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, বিশ্বাম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজার দিরাই, শাল্লাসহ ১১টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে উপজেলার ও জেলা সদরের সঙ্গে সড়কপথে ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। তাই বছরে পর বছর বর্ষায় ৬ মাস নদীপথে পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ইঞ্জিনচালিত কাঠের তৈরি নৌকা। আর বেশি লাভের আশায় এসব নৌকায় অতিরিক্ত মালামাল, পরিবহনে অদক্ষ চালক, অসতর্কতা, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ও জোড়াতালি দিয়ে ত্রুটিযুক্ত ট্রলার চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
২০১০ সালের ৮ জুন সকালে ট্রলার ডুবিতে জেলার ধর্মপাশা উপজেলার শৈলচাপর হাওরে ট্রলার ডুবে শিশু, নারী ও শিক্ষার্থীসহ ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে জামালগঞ্জে ট্রলার ডুবে ৫ শিশুসহ ৮ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। একেই বছরের ২৬ জুন সীমান্তবর্তী যাদুকাট নদীতে পারাপারের সময় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যু ঘটে। ২০জুলাই সুরমা নদী পারাপারের সময় নৌকা ডুবে মারা যায় এক ইউপি সদস্য। একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জ জেলার কাঠরই নদীতে বর যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে নববধূসহ ২ জনের মৃত্যু হয়। ১৮ ডিসেম্ভর উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ধনু নদীতে ৪০ জনের মৃত্যু ঘটে।
২০১২ সালের ১০ ফ্রেরুয়ারি ট্রলার ডুবে ৭ জনের মৃত্যু হয়। ৪ আগস্ট র্ধমপাশা হাওরে ট্রলার ডুবিতে ৪ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। ১১ জুন সুনামগঞ্জে ট্রলার ডুবে ১ জনের মৃত্যু ঘটে। ২০১৪ সালের ৩ ফ্রেরুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক ও দোয়ারা বাজার উপজেলার লক্ষীবাউর- দোহালিয়ায় সুরমা নদীতে নৌ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনের পুড়ে নিহত হয়েছে শিশুসহ ১২ জন। ২৮ ফ্রেরুয়ারি সীমান্ত নদী পাঠলাই নদীতে খেয়া পারাপারের সময় ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ২৯ মার্চ যাদুকাটা নদীতে নৌকা ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ জুন তাহিরপুর উপজেলার পাতারগাঁও সেতুর পাশে নৌকাডুবিতে মা, ছেলে এবং নানি ৩ জন নিহত, ২২ জুন ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭ সুরমা নদীতে নৌকা ডুবে ৩ জনের মৃত্যু, ২০ জুলাই গোমাই নদীতে নৌকা ডুবে এক স্কুলশিক্ষক নিহত হয়। ২৩ আগস্ট বাংলা বাজার এলাকায় নৌকা ডুবে ১ জনের মৃত্যু, ৩১ অক্টোবর নৌকা দিয়ে পাড় হতে গিয়ে এক বিজিবি সদস্য নিহত হয়। ১২ নভেম্বর ১৫ জন জেএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়। ১৩ নভেম্বর সীমান্ত রঙ্গাছড়া নদীতে একজনের মৃত্যু। ২০১৬ সালে ১৭ জুলাই ধারাম হাওরে নৌকা ডুবে একজনের মৃত্যু, ২২ জুলাই সুরমা নদীতে প্রবল ¯্রােতে নৌকা ডুবে একজনের, ২৬ আগস্ট একজনের, ২৯ আগস্ট একজনের মৃত্যু হয়েছে। ০৯,০৮,১৭ সালে তাহিরপুর উপজেলার ধাওয়া বিলে নৌকা ডুবে চারজন জন নিহত হয়। সম্প্রতি ১ জুলাই ২০১৮ সালে নৌ দুর্ঘটনায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার আরা বেগম ও জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের জাল্লাবাদ গ্রামের মোহাম্মদ এমদাদুল হক নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আরও ৫ জন।
সাদেক আলী, রুপম আখঞ্জি, হুসাইন, সজলসহ জেলার সচেতন হাওরবাসী জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরাঞ্চলে ইঞ্জিনচালিত কাঠ ও স্টিলের নৌকা ও যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করা যাবে না, বন্ধ করলে আমরা চলাচল করতে পারব না।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, হাওর ও নদীর সব দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মেরিন কোর্ট স্থাপন ও বিআইডব্লিউটির শাখা স্থাপন করা, হাওরাঞ্চলে সতর্কতার সঙ্গে নৌযান চলাচল করার জন্য যাত্রী, নৌ শ্রমিক ও মালিককে সতর্কতা অবলম্বন করলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব হবে।