এইখানে এক নদী ছিল
আমিনুল ইসলাম, কানাইঘাট (সিলেট)
🕐 ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০১৯
কবি নজরুল তার গানে লিখেছিলেন ‘নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা, সকাল বেলায় আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যা বেলা।’ নদী যেমন অনেক কিছু কেড়ে নেয়, তেমনি আবার অনেক কিছু দিয়ে যায়। কিন্তু ধরপড়ী নদী কিছু না নিলেও প্রভাবশালীদের দিয়ে গেছে সাত রাজার ধন। সিলেটের কানাইঘাট পৌর শহরের বুক চিরে বয়ে চলা ধরপড়ী নদী মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে দখল আর দূষণে পড়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। এ স্থানে বাস্তবে নদীর আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
নদীর জায়গা দখল করে এমনভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যেটা দেখলে মনেই হবে না এক সময় এখানে নদী ছিল। তবে সরেজমিন নদীটির দেখা না মিললেও মানচিত্র খুললে দেখা মিলতো ধরপড়ীর। কিন্তু আজ আর কোথায়ও তার অস্তিত্ব নেই। প্রভাবশালীরা জরিপের সর্বশেষ ধারায় মানচিত্রে নদীর শ্রেণী পর্যন্ত পাল্টে দিয়েছে। এখন আর মানচিত্রেও নদীর অস্তিত্ব নেই।
জানা যায়, বিশাল এ নদীটির উৎপত্তিস্থল ছিল দীর্ঘতম নদী সুরমা থেকে। আর তার ইতি ঘটেছে পশ্চিম হাওড়ের চড়িখালে গিয়ে। প্রায় ১০ কিলোমিটার এ নদীটির রূপ কাহিনী আজও মানুষের মুখে মুখে রটে আছে। পৌরসভার নন্দিরাই, নয়া তালুক, নয়াখলা, দুর্লভপুর, ধর্মপুর, ধনপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে এ নদী। এক সময় এ এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র নৌপথ ছিল এটি।
বর্তমানে এ নদীর ওপর আগ্রাসনের কারণে আগামী দিনগুলোতে এখানকার পরিবেশসহ কানাইঘাট পৌর শহরের সার্বিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটবে। সামান্য বৃষ্টিপাত হলে শুধু জলাবদ্ধতা দেখা দেবে না বরং পৌরশহরে ভয়াবহ কঠিন রূপ ধারণ করবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
কারণ নদীটি পুরোপুরি মরে গেলে দুই তীরের জনজীবনে নিশ্চলতা সৃষ্টি হবে। পৌর শহর গঠিত হওয়ার পর থেকে প্রভাবশালীরা মরা নদীর জমি ভরাট করে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। তাই এখানকার মানুষের দাবি এখনও সময় আছে কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এবং প্রজাতন্ত্রের স্বার্থে ধরপড়ি নদীটি খননে পদক্ষেপ নেওয়া হোক। শুক্রবার সরেজমিন কানাইঘাটে গেলে স্থানীয়রা জানান, নদী হারিয়ে যাচ্ছে বলে এ দেশে নজরুল, সুকান্ত ও জসীম উদদ্ীনের মতো কবি আর জন্মাবে না।
কানাইঘাট পৌর শহরকে বাঁচাতে হলে ধরপড়ী নদী খনন করতে হবে। তারা এবারের নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য টেনে বলেন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে কালের আবর্তে হারিয়ে যাওয়া নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা ধরপড়ী নদী খননের মাধ্যমে তার বস্তবায়ন দেখতে চান।