কুষ্ঠ ঝুঁকিতে চা শ্রমিকরা
তোফায়েল পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
🕐 ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফাঁড়ি বাগানসহ ১৪টি চা বাগানের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ কুষ্ঠরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। যাদের অধিকাংশই চা শ্রমিক। তবে চা বাগান ছাড়াও সমতল এলাকার বাসিন্দারাও আছেন ঝুঁকিতে। গত বছর উপজেলার সবগুলো বাগানে জরিপ করে ৭১ জন রোগীকে লক্ষণ দেখে সনাক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এসব এলাকায় পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়ায় এ ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ২০১৬ সালে একজন রোগী সনাক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে আরও একজন রোগী চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। বর্তমানে এ উপজেলায় সাতজন কুষ্ঠরোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। কুষ্ঠরোগের চিকিৎসায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনজন রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত উপজেলার ১৪টি বাগানের সব চা বাগানে জরিপ করেছে বেসরকারি সংস্থা লেপ্রা বাংলাদেশ। এ সময় বাগানগুলো থেকে ৭১ জনের শরীরে কুষ্ঠরোগের লক্ষণ দেখতে পান তারা। তবে তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ রোগ ছোঁয়াছে কিংবা বংশগত নয়। তবে সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় বলে জানান চিকিৎসকরা। চা বাগান ছাড়াও সম্প্রতি সমতল এলাকার বেশ কয়েকজন রোগীর মাঝে প্রাথমিক লক্ষণ পাওয়া গেছে। এদিকে, গত বুধবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হল রুমে কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে উপজেলার চিকিৎসাধীন রোগী, প্রাথমিক লক্ষণ থাকা রোগী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে এনজিও সংস্থা লেপ্রা বাংলাদেশ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বর্ণালী দাস জানান, মাঠপর্যায়ে সচেতনতা না থাকায় এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। রোগ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় রোগীরাও অবহেলা করছেন চিকিৎসা নিতে। স্বাস্থ্য বিভাগ এ উপজেলা থেকে পুরোপুরি কুষ্ঠ নির্মূলে কাজ করছে। এ রোগে খুব কম মানুষ আক্রান্ত হয়। তবে চা-বাগান এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও অপুষ্টির শিকার মানুষেরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। কুষ্ঠরোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা দিলে রোগটি নির্মূল করা যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে ২-৫ বছর পর রোগীর শরীরে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ায় অনেক সময় রোগী বিকলাঙ্গ হয়ে যান। আবার এর চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদী হওয়ায় অনেক রোগী মাঝপথেই চিকিৎসা নেওয়া বন্ধ করে দেন।