ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
🕐 ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০১৮

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত জীববৈচিত্রে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। দেশে বিদ্যমান সাতটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম।

জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। কিন্তু প্রভাবশালীদের বন দখল, অবাধে বৃক্ষনিধন, বনের মধ্যে রেলপথ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ উদ্যানের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন এক হাজার ২৫০ হেক্টর। এ বনে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। তার মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি রয়েছে। এ ছাড়াও নানা প্রজাতির জীবজন্তু এ বনে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে এ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরীণ সড়ক ও রেলপথে প্রতিনিয়ত দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় কিংবা চাকায় পিষ্ট হয়ে কোনো না কোনো বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। ফলে লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত সড়ক ও রেলপথসমূহ বন্য প্রাণিকুলের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া ছুটির সময়ে মাত্রাতিরিক্ত পর্যটকদের কারণে বনের বন্যপ্রাণীর বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানবাহনের হুড়োহুড়ি, শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক পানির অভাব, খাবার ও নিরাপদ বাসস্থান সংকট- এসব মিলিয়ে উদ্যানের জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সুরক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
এদিকে লাউয়াছড়া উদ্যানের আশপাশে ইকো ট্যুরিজমের নামে বনজঙ্গল ও মাটি কেটে কটেজ নির্মাণ, বাগান করার নামে লাউয়াছড়ার জায়গা দখল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে খাবারের সন্ধানে জঙ্গলের দুর্লভ প্রাণীগুলো জনপদে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়ছে।
মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ জানান, বন্য প্রাণীগুলো আমাদের জাতীয়  সম্পদ। এদের নির্ভয় জীবনযাপন, সুস্থতা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের। কিন্তু এখন যেভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। তাতে করে প্রাণিকুলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে লাউয়াছড়াকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ স ম সালেহ সুহেল জানান, লাউয়াছড়াকে রক্ষা করতে আমরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্টদের একাধিক দাবি জানিয়ে আসছি। এ উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত রেল ও সড়কপথের বিকল্প ব্যবস্থা না করলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ট্রেন ও গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে অর্ধেকের বেশি প্রাণী মারা যাবে। এ উদ্যানকে রক্ষা করতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।  
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন কর্মকর্তা এ এম শামসুল মোহিত চৌধুরী জানান, বন বিভাগে লোকবল কম থাকায় আমাদের কাজে অসুবিধা হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করে আমরা লাউয়াছড়ার মাঝে অবস্থিত সড়কের জন্য বিকল্প চিন্তা করছি। তাছাড়া নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের ব্যবস্থা নির্ধারণ করার কথা ভাবছি।

 
Electronic Paper