সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার এক বছর
সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার
🕐 ৩:০০ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৩
সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলার সকল ধর্ম, পেশা ও বয়সের মানুষের জন্য ২০২২ সাল স্মরনীয় হয়ে থাকবে। বছরের মে-জুন ছিলো দূর্ভোগ-দূর্দশার। শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ভেঙ্গেছে কয়েক হাজার দরিদ্র পরিবারের ঘর-বাড়ী। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ও গবাদী পশু। স্বজন হারিয়েছে অনেক পরিবার।
বন্যার প্রলয়ঙ্কারী রূপ দেখেছেন দুই উপজেলাবাসী। পাহাড়ি ঢলের আঘাতে বসতবাড়ি ছেড়ে জীবন রক্ষায় অনেকেই সড়ক-মহাসড়কে অনাহারে-অর্ধাহারে রাত কাটিয়েছেন।
গত বছরের ১৬ মে ভোরে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রথম দফা বন্যায় ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলার নদ-নদী ও হাওড়গুলোতে পানি বেড়ে দুই উপজেলার সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ডুবে যায় উপজেলার গ্রামাঞ্চলের ৯০ ভাগ এলাকা। জনসাধারনকে বাঁচাতে খুলে দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০ মে পর্যন্ত দুই উপজেলার বন্যায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্ধি হয়েছিলেন। বিপর্যস্থ অসহায় মানুষদের বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। ওই বন্যায় দুই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশী বিপদে পড়তে হয়েছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্ম আয়ের হাজার হাজার পরিবারের। মাত্র ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মুহুর্তের মধ্যে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন হাজার হাজার পরিবার। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, মুঠোফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা। জনজীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে নেমে আসে স্থবিরতা। হাটবাজার-দোকানপাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্য কেনারও সুযোগ ছিল না। দেখা দেয় খাবার পানির তীব্র সংকট।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফা বন্যায় ছাতকের ৬টি ইউনিয়ন ও দোয়ারাবাজারের ৪টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন লক্ষাধিক মানুষ। শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হয়। গবাদি পশু মারা যায়। ফসলহানি হয়েছে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির। শিক্ষা প্রতিষ্টানের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মন্দিরের ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। নলকূপ, গভীরনলকূপ ও জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ বন্যা কবলিতদের সহায়তায় নিবেদিত ছিলেন। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বন্যা দূর্গত এলাকায় রান্না করা খাবারসহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বানভাসিদের চারদিকে যখন হাহাকার, তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসা গাড়ী ভর্তি ত্রাণ নিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন বিত্তশালী একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।