ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গোয়াইনঘাটে দূষিত বর্জ্যে বিপন্ন পরিবেশ

শাহ আলম, গোয়াইনঘাট
🕐 ৪:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩

গোয়াইনঘাটে দূষিত বর্জ্যে বিপন্ন পরিবেশ

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর ও আশপাশের বাড়িঘর, বাসায় ব্যবহৃত দৈনন্দিন ব্যবহার্য পলিথিন, প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র ড্রেন, খোলা পতিত জমি, কালভার্ট, পুকুর নদীসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলা হচ্ছে। এতে নদী, পুকুরের পানি নষ্ট, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যত্রতত্র ফেলে রাখা এসব পলিথিন, অপচনশীল নদী ও ফসিল জমিতে গিয়ে পড়ছে। এসব বর্জ্যে দ্বারা নদী, খাল ও পুকুরের তলদেশ ভরাট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে।

মৎস্য ও কৃষি আবাদ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি নদী ও পুকুরের পানি নষ্ট হচ্ছে। গোয়াইন অববাহিকার অত্রাঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ নদীর পানি পান করাসহ দৈনন্দিন সকল কাজে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু ময়লা আবর্জনা দৈনন্দিন ব্যবহার্য বর্জ্য নদীর পানির সঙ্গে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পেটের পিড়াজনিত নানা রোগে ভুগছে নদীর পানি ব্যবহারকারী মানুষজন। বর্জ্য বিষক্রিয়ায় নদীর মাছের প্রজনন হ্রাস পাওয়াসহ মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয়দের মধ্যে বর্জ্য, ময়লা আবর্জনা ব্যাপক গণসচেতনতা না থাকায় এমনটা চলছে দীর্ঘদিন থেকে। তবে, এসব পরিবেশ বিপর্যয়রোধে গোয়াইনঘাট উপজেলা সৃষ্টির পর প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান।

উপজেলা উন্নয়নে জড়িত সংস্থার অর্থায়নে নেয়া হয়েছে বিশাল প্রকল্প। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান উপজেলায় গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে বাড়িঘরে ব্যবহার্য পলিথিন, প্লাস্টিকের উপচনশীল বর্জ্য ও দ্রবাদি যত্রতত্র না ফেলতে এবং একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই লক্ষ্যে তিনি ইজিভিপি ও বাংলাদেশে অবস্থানরত জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকার প্রাথমিক একটি প্রকল্প নিয়েছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ১০টি ইউনিট গড়ে তুলে পরিবেশবান্ধব একাধিক ডাস্টবিন স্থাপন, কর্মী, সুপারভাইজার নিয়োগের মাধ্যমে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে তিতারাই, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, বাইপাস হয়ে পিরিজপুর পর্যন্ত বর্ধিত থাকবে প্রকল্পের কাজ।

উপজেলা সদরের আশপাশ থেকে শুরু হয়ে ভবিষ্যতে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের গ্রামেও বর্ধিত হবে এমন উদ্যোগ। নদীর তলদেশ, পানির দূষণ, কৃষি আবাদের সমূহ ক্ষয়-ক্ষতিরোধে কোনো ক্রমেই পলিথিন, প্লাস্টিক ও অপচনশীল দ্রব্য কিংবা বর্জ্য দ্বারা পরিবেশ নষ্ট করতে দেয়া হবে না। ইতিপূর্বে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান জানান, প্রতি বছর গোয়াইনঘাটে ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড হয়, এতে সকল ধরনের বর্জ্য নদীতে পড়ে পানি দূষিত করে, বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি নষ্ট করে। একইসঙ্গে দেখা দেয় নানান রোগবালাই। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি গ্রামে শহরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির পরামর্শে উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যেহেতু গোয়াইনঘাট উপজেলায় কোনো পৌরসভা নেই, তাই এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ উঠে এসেছে। আমরা সকলের পরামর্শ নিয়ে একটি নীতিমালার মাধ্যমে পুরো ব্যবস্থাপনা সাজাবো। প্রাথমিকভাবে উপজেলার সদরসহ পার্শ্ববর্তী ৩টি গ্রাম নিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরবর্তীতে এর এলাকা আরও বৃদ্ধি করা হবে।

 
Electronic Paper