ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আজমিরীগঞ্জে কমেছে দেশীয় মাছের উৎপাদন

এনামুল হক মিলাদ, আজমিরীগঞ্জ
🕐 ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৫, ২০২২

আজমিরীগঞ্জে কমেছে দেশীয় মাছের উৎপাদন

একসময় দেশীয় মাছের রাজধানী হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কমেছে দেশীয় মাছের উৎপাদন। দুই দশক আগেও এখানকার হাওর-বিল-নদী থেকে সংগৃহীত দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হতো বিদেশে। এ জন্য প্রায় চার দশক আগে বেসরকারিভাবে আজমিরীগঞ্জ ফিস ইন্ডাস্ট্রি নামে সিলেট বিভাগে প্রথম গড়ে ওঠেছিল একটি ফিস ইন্ডাস্ট্রিজ ।

গেল দুই দশকে আজমিরীগঞ্জ সহ জেলায় সার্বিক মাছের উৎপাদন বাড়লেও দেশীয় মাছের উৎপাদন কমেছে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিকটন।

মৎস্যখাতে জড়িতরা বলছেন- হাওরের মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণ, বিভিন্নভাবে হাওরের পরিবেশ দুষণ, অবৈধ কারেন্ট,চায়না দুয়াড়ি জালের ব্যবহার, জলাশয় সেচে মাছ ধরা এবং ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দেশীয় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ।

দেশীয় মাছের উৎপাদন কমায় হাওরের জেলেদের আয়ও কমেছে। নিরুপায় হয়ে অনেকে বদল করেছেন পেশা আবার অনেক জেলে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন শহরে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় প্রাকৃতিক জলাশয়ের পরিমাণ ৮১ হাজার ৬৭১ হেক্টর। এক দশক আগে (২০১২ সালে) জেলায় দেশীয় মাছের উৎপাদন ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৩ মেট্রিকটন। যা বর্তমানে এসে দাড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ মেট্রিকটনে। অর্থাৎ গেল এক দশকে প্রাকৃতি জলাশয়ে মাছের উৎপাদন কমেছে ৭ হাজার ৫২৬ মেট্রিকটন।

তবে আজমিরীগঞ্জ সহ জেলায় বেড়েছে চাষ করা মাছের পরিমাণ। ২০১২ সালে ২৪ হাজার ২৬৪টি পুকুরের ৪ হাজার ১৯১ হেক্টর এলাকায় মাছ চাষ হতো ১৬ হাজার ১৪৫ মেট্রিকটন। বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৩১টিতে। যার ৫৮ হাজার ৯০ হেক্টর এলাকায় মাছের উৎপাদ হচ্ছে ২১ হাজার ৮৫৩ মেট্রিকটন। অর্থাৎ দুই দশকে চাষ করা মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫ হাজার ৭০৮ মেট্রিকটন।

বর্তমানে জেলায় রেজিস্ট্রিভুক্ত জেলের সংখ্যা ৪১ হাজার ২৯৪ জন। জেলায় মাছের চাহিদা ৪৫ হাজার ৯২ দশমিক ১২ মেট্রিকটন। সার্বিক উৎপাদন হচ্ছে ৪৯ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৪৬ মেট্রিকটন।

মাছ ব্যবসায়ী ও মৎসজীবিরা জানান, জেলার হাওর অঞ্চল আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও নবীগঞ্জের হাওরে পাওয়া যেত বোয়াল, চিংড়ি, রুই, কাতলা, শিং, মাগুর, কৈ, ট্যাংড়া, পুটি, বইচা, শোল, বাইমসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। এখন আর আগের মতো এসব মাছ পাওয়া যায় না। এছাড়া পাবদা, ঘাঘট, চাপিলা, ট্যাংড়া, চিতল, কালবাউশ, খালিশা, গুতুমসহ বেশ কিছু প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

মৎস্যজীবি অরবিন্দু দাস বলেন, ৮/১০ বছর আগে হাওরে জাল ফেললেই মাছ ভরে যেতো। কিন্তু এখন সারাদিন জাল বেয়েও ২ হাজার টাকার মাছ মারা যায় না।

হাওরের মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন নবী হোসেন তিনি বলেন, এখন আর আগের মাতো জালে মাছ আসে না। তবে মাছ না আসার কয়েকটি কারণ ও দেখিয়েছেন তিনি।

নবী হোসেন বলেন, এখন আর আগের মতো পানি হয় না। যখন পানি শুকায় তখন কিছু জেলে হাওর সেচে মাটির নিচ থেকেও মাছ ধরে নিয়ে আসে। কারেন্ট জাল ও বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। যে কারণে পোনামাছ গুলোও জালে আটকা পরে। আর এতেই মাছ আর হাওরে থাকে না। যে কারণে অধিকাংশ মাছের প্রজাতি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

মৎস্য ব্যবসায়ী মঙ্গল মিয়া বলেন, আগের মতো এখন দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। যে কারণে মাছের দামও এখন বেশি। যদি সরকার উদ্যোগ নিয়ে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে তাহলে মাছের দামও কমবে পাশাপাশি দেশীয় মাছের পুষ্টিও পাবে মানুষ।

এছাড়াও হাওরে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশকর্মীরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ (বাপা)র সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হাওর আমাদের ঐতিহ্য। হাওর রক্ষায় আমাদের বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তা করতে হবে। এখন হাওরে বাধ দিয়ে সড়ক নির্মান হচ্ছে। এতে হাওরে আন্দোলিত করে পানি আসতে পারছে না মাছ তার প্রসারিত জায়গাও পাচ্ছে না। যে কারণে দেশীয় মাছের উৎপাদন দিন দিন কমছে।

জেলা জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হাওরে দেশীয় মাছের পরিমাণ বাড়াতে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত পোনামাছ অবমুক্ত করা হচ্ছে। সেই সাথে অবৈধ কারেন্ট জাল ও বেড়জাল বন্ধে চালানো হয় অভিযান। উপকুলের ন্যায় মাছের প্রজনন মৌসুমে হাওরের জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান এই কর্মকর্তা।

 
Electronic Paper