মানবতার টানে বানভাসিদের পাশে ব্যাংক কর্মকর্তা
এনামুল হক মিলাদ, আজমিরীগঞ্জ
🕐 ৮:১৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২২

আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের যুগ্ন পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন,বসবাস করেন ঢাকায়। স্ত্রী সুলতানা সালেহা সুমী দুই সন্তান সহ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত রযেছেন বিগত প্রায় এক বছর ধরে। সাপ্তাহিক ছুটিতে প্রায়ই রাজধানী ঢাকা থেকে স্ত্রী সন্তানের কাছে ছুটে আসেন আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম।
গত মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে আজমিরীগঞ্জে এসেছিলেন স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। কিন্তু ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখে হৃদয় নাড়া দিয়ে উঠে আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েমের। পরদিন বুধবার ঢাকায় নিজের অফিসের কযেকজন সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন নিজের সামর্থের ভিতরে বন্যা কবলিত হাওড়বাসীর জন্য কিছু করবেন। বৃহস্পতিবার নিজের বেতনের টাকা এবং সহকর্মীদের সহযোগীতায় এক লক্ষ টাকার ত্রাণ সামগ্রী ক্রয় করেন আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম।
বৃহস্পতিবার রাতেই নিজ কর্মস্থলের দুই সহকর্মী মোহাম্মদ ওয়াসিম (উপপরিচালক) এবং সুব্রত সরকার (উপপরিচালক) এসে পৌঁছান আজমিরীগঞ্জে রাতেই দুই সহকর্মী, স্ত্রী সুলতানা সালেহা সুমী এবং সন্তানদের নিয়ে সেই ত্রাণ প্যাকেট করা শুরু করেন। শুক্রবার (২৪ জুন) সকালে দুই সহকর্মী এবং স্ত্রীকে সাথে নিয়ে নৌকা যোগে ত্রাণ নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের প্রত্যান্ত অঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের দ্বারে দ্বারে। দিনভর সেই ত্রাণ বন্যায় পানি বন্দী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিয়ে সন্ধ্যায় কিছুটা মানসিক তৃপ্তি নিয়ে ফেরেন আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম।
ত্রাণ বিতরণে আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম সাথে ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এবং কাকাইলছেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজবাহ উদ্দীন ভুঁইয়া, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
কথা হয় আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েমের সাথে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী সুলতানা সালেহা সুমী আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রায়ই সাপ্তাহিক ছুটিতে আমি আজমিরীগঞ্জ আসি। এতোদিনে এখানকার মানুষের সাথে আমার আসলে হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
গত মঙ্গলবার এসে এই পরিস্থিতি দেখে আসলে আমি খুব মর্মাহত হই। আমার সহকর্মীদের সাথে কথা বলে রাতেই আমার স্ত্রীকে বলি আমি হাওরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। বন্যায় এই হাওরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দেখে আমি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আসলে এই গুলো করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সুলতানা সালেহা সুমী জানান, উনি ছুটিতে এসে এই অবস্থা দেখে আমাকে বলেন উনি কিছু করতে চান। তারপর দিন সকালে উনি বলেন নিজে এবং সহকর্মীদের সহযোগীতায় এক লক্ষ টাকার খাদ্য সামগ্রী উনি বন্যার্তদের পৌঁছাতে চান। আমি উনাকে বলি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে।
পানি বন্দি অবস্থায় যারা বাড়িতে রয়েছেন তাদের মাঝে বিতরণ করা যায়। তারপর বৃহস্পতিবার রাতেই আমরা খাদ্য সামগ্রী গুলো প্যাকেটজাত করে শুক্রবার সারাদিন পানি বন্ধী মানুষের৷ দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়ে আসি। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাড়াতে পারাটা পরম ভাগ্যের।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
