ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নবীগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

এম এ মুহিত, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
🕐 ৯:৪১ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২২

নবীগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। উজান-ভাটি দুদিকের পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ,বানিয়াচংয়ে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানেবতর জীবনযাপন করছেন।

জানা যায়- সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার পানি কুশিয়ারা-কালনী,বিবিয়ানা দিয়ে নামছে নবীগঞ্জ উপজেলায়। ভাটি অঞ্চলের হাওরগুলোতে পানি বেড়ে বইছে উজানের দিকে। ফলে উজান-ভাটি দুদিক থেকেই নবীগঞ্জ উপজেলায় ঢুকছে পানি। এছাড়া আজমিরীগঞ্জে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ও নবীগঞ্জে স্লুইসগেইটের রাস্তা, রেগুলেটর এবং বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ডুকছে নবীগঞ্জের পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে। ফলে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। বৃষ্টি ও ঢলে নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ইনাতগঞ্জ, দীঘলবাক, করগাঁও, বড় ভাকৈর (পশ্চিম), বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের সকল এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

নবীগঞ্জ পৌরসভা ও আউশকান্দি, কুর্শি , নবীগঞ্জ সদর, বাউসা, গজনাইপুর, কালিয়ারভাঙ্গা, পানিউমদা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪০টি পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৩০টি গ্রামের বিদুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। দিশেহারা অসহায় মানুষজন গবাদিপশু ও শিশু সন্তান নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে প্রায় ৪ হাজার নারী-পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সময়ের সাথে সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। বাড়ছে হাহাকারের চিত্র।

এমন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে ৩৩টন চাল, ১০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রশাসন, সংসদ সংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সকল সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার্ত মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছেন।

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ঔষধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন প্রদান করা হচ্ছে। তবে সময় যত বাড়ছে বন্যার্ত মানুষের আর্তনাদ বেড়েই চলেছে এমন পরিস্থিতি বন্যার্ত মানুষের দাড়াঁনোর আকুতি সকলের।

করগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দাশ রানা বলেন- পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে সময় যত যাচ্ছে পানি বাড়ছে, ভাটির পানিতে করগাঁও ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে।

নবীগঞ্জ পল্লী বিদুৎ জোনাল অফিসের (ডিজিএম) আলীবর্দি খান সুজন বলেন- বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৩০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার গ্রহকের বিদুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহি উদ্দিন জানান, বন্যার্ত মানুষের পাশে আমরা সবসময় আছি, খাদ্য সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে, নতুন করে চাল-শুকনো খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে সবাইকে এই দুর্যোগে এগিয়ে আসার আহবান জানান ইউএনও।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন বলেন, ভাটি অঞ্চলের হাওরগুলোতে বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় উজানের কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি নামছেনা। ফলে উজান-ভাটি দুদিক দিয়ে নবীগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচংয়ে পানি প্রবেশ করছে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। হাওরের পানি আস্তে আস্তে নেমে গেলে বন্যার উন্নতি হবে।

 
Electronic Paper